বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকার
প্রিয় বন্ধুরা আমি আমার এই আর্টিকেলটিতে বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও আমাদের দেশের রাজনৈতিক কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
আপনারা যদি মনোযোগ দিয়ে আমার আর্টিকেলটি পড়েন আশা করি বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক তথ্যটি পাবেন। আসুন দেরি না করে পড়তে থাকি জানতে থাকি।
ভূমিকাঃ
বর্তমানে বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। তার পরেও দ্রব্যমূল্যে লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এর পেছনে বিদেশি কারণ ছাড়াও আমাদের অভ্যন্তরীণ কারণেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষ করে রাজনৈতিক কারণ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের পণ্য মজুদ এবং অধিক মুনাফার জন্য সাধারণ জনগণ চাপের মুখে পড়ে আছে ।আসলে এই সমস্যা থেকে আমরা কিভাবে প্রতিকার পাব।আসুন বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
দ্রব্যমূল্য কিঃ
পণ্যের কাঁচামালের উৎপাদন থেকে শুরু করে কেনা বেচা পর্যন্ত যে দাম নির্ধারণ করা হয় তাই হচ্ছে দ্রব্যমূল্য। দ্রব্যমূল্য আবহাওয়ার ধরন ও রাজনৈতিক কারণে দ্রব্যমূল্য উঠানামা করে। এক কথায় বলা যায় দ্রব্যমূল্য বলতে বোঝায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট স্থানে পণ্যের পরিষেবার গড় মূল্যকেই বোঝায়।
উদাহরণ হিসেবে দেখা যাক
চালের দ্রব্যমূল্য: প্রতি কেজি চাল কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পরিবহন খরচের দ্রব্যমূল্য: বাস, ট্রেন, রিক্সার ভাড়া কত টাকা।
বাসস্থানের দ্রব্যমূল্য: ভাড়া, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের খরচ কত টাকা।
দ্রব্যমূল্য পরিমাপ:
মুদ্রাস্ফীতি: একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার।
গ্রাহক মূল্য সূচক (সিপিআই): শহরাঞ্চলে বসবাসকারী পরিবারগুলির দ্বারা ক্রয় করা পণ্য ও পরিষেবাগুলির গড় মূল্যের পরিবর্তন পরিমাপ করে।
পাইকারি মূল্য সূচক (ডব্লিউপিআই): পাইকারি বাজারে পণ্যের গড় মূল্যের পরিবর্তন পরিমাপ করে।
আরো পড়ুনঃ মাসে ৫০,০০০ টাকা আয় করার উপায়
বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণঃ
বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বহির্বিশ্ব অনেকটা দায়ী। কারণ যুদ্ধবিগ্রহ লেগে থাকার কারণে আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পায়।এছাড়া রাজনৈতিক জটিলতা কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া রয়েছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী যারা পণ্য মজুদ করে রাখে যার ফলে আমাদের দেশের দ্রব্য মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসুন বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বহিঃস্থ কারণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি:
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি:
২০২২ সালের শুরু থেকেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
বাংলাদেশ জ্বালানি তেলের জন্য ব্যাপকভাবে আমদানির উপর নির্ভরশীল, তাই বিশ্ববাজারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি পড়ে।
আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি:
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সরবরাহ ব্যবস্থার ব্যাঘাত, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ঘাটতি রয়েছে, তাই দেশের চাহিদা পূরণের জন্য আমদানির উপর নির্ভর করতে হয়।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন:
মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
আমদানিকৃত পণ্যের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হল টাকার অবমূল্যায়ন।
অভ্যন্তরীণ কারণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি:
পরিবহন খরচ বৃদ্ধি:
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর ফলে পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়ে যায়, যা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
সরবরাহ ব্যবস্থার ত্রুটি:
দেশে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটি রয়েছে, যার ফলে মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে।
সিন্ডিকেট ও কৃত্রিম সংকট:
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে।
দুর্নীতির কারণে
সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে বাজারে নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।
অপরিকল্পিত নগরায়ন:
কৃষি জমি কমে যাওয়ার ফলে খাদ্য উৎপাদন কমে এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি:
দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন না হওয়ায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিকারঃ
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিকার করতে গেলে আগে আমাদের জনগণকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে বেশ কিছু রাজনীতিবিদ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিকার সম্ভব হয় না। তাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিকার করতে হলে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স রাখতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখতে হবে। তাহলে হয়তো আমরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিকার করতে পারবো। আসুন এ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা:
বাজার নিয়ন্ত্রণ:
বাজারে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করে কৃত্রিম সংকট ও সিন্ডিকেট বন্ধ করা।
পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমানো।
কর্তৃপক্ষের তদারকি:
বাজারে নিয়মিত তদারকি বৃদ্ধি করে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সরবরাহ বৃদ্ধি:
কৃষি ও অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে দেশীয়ভাবে পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি করা।
সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি:
দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি:
কৃষকদের প্রশিক্ষণ, উন্নত বীজ ও সার সরবরাহ, এবং सिंचाई ব্যবস্থা উন্নত করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
জনগণের পক্ষ থেকে:
সচেতনতা বৃদ্ধি:
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা।
ন্যায্য মূল্যে পণ্য ক্রয়ের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
অপচয় রোধ:
খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের অপচয় রোধ করা।
পরিমিত খরচ:
অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আয়ের সাথে খরচের ভারসাম্য বজায় রাখা।
সরকারের নীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞান রাখা:
সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন ভর্তুকি ও সুবিধা সম্পর্কে জ্ঞান রাখা এবং সেগুলো গ্রহণ করা।
অন্যান্য পদক্ষেপ:
দুর্নীতি দূরীকরণ:
দুর্নীতি দূরীকরণের মাধ্যমে বাজারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন:
পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবহন খরচ কমানো।
পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতি:
পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
গবেষণা ও উন্নয়ন:
কৃষি ও অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। সরকার, জনগণ এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্কঃ
দ্রব্যমূল্য বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক শেষ নেই । যতই বিতর্ক হোক না কেন তারপরও দুর্বমূলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না । আসুন বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বিতর্কের কারণ:
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি:
সরকার বলছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি
বিরোধী দল বলছে, সরকারের অদূরদর্শিতার কারণে
আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি:
সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি
বিরোধী দল বলছে, সরকারের নিয়ন্ত্রণের অভাবে
মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন:
সরকার বলছে, টাকার অবমূল্যায়ন
বিরোধী দল বলছে, সরকারের ভুল নীতির কারণে
অভ্যন্তরীণ কারণ:
সরকার বলছে, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি,
বিরোধী দল বলছে, সরকারের দুর্নীতি,
বিতর্কের সমাধান:
সরকারের পক্ষ থেকে:
সরকার বলছে, জ্বালানি তেলের বিকল্প উৎস
বিরোধী দল বলছে, সরকারের পদক্ষেপ
জনগণের পক্ষ থেকে:
সরকার বলছে, জনগণকে
বিরোধী দল বলছে, জনগণের
বিতর্কের মূল বিষয়:
কারণ:
সরকার ও বিরোধী দল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির।
বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রভাবঃ
বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব যেমন অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলেছে তেমনি জনগণের উপরও প্রভাব ফেলেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সমাজের উপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে। এর প্রভাবগুলি নিচে আলোচনা করা হলো।
জনগণের উপর প্রভাব:
- জীবনযাত্রার মান: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে জনগণের জীবনযাত্রার মান ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে।
- আয়ের উপর প্রভাব: বেশিরভাগ মানুষের আয়
- খাদ্য নিরাপত্তা: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে
- স্বাস্থ্য:
- শিক্ষা:
- মানসিক চাপ:
- অর্থনীতির উপর প্রভাব:
- মুদ্রাস্ফীতি: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে
- বিনিয়োগ:
- ব্যবসা-বাণিজ্য:
- গরিবি:
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি:
- রাজনীতির উপর প্রভাব:
- জনগণের অসন্তোষ: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে
- সামাজিক অস্থিরতা:
- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা:
- সর্বশেষ অবস্থা:
- দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
- সরকার
- জনগণ
- দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
- এই সমস্যা সমাধানে
- সমাধান:
- দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।
- সরকারের পক্ষ থেকে:
- বাজার নিয়ন্ত্রণ
- কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি
- দুর্নীতি দূরীকরণ
- জনগণের পক্ষ থেকে:
- সচেতনতা বৃদ্ধি
- পরিমিত খরচ
- সরকারের নীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞান রাখা
- অন্যান্য পদক্ষেপ:
- পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন
- পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতি
- গবেষণা ও উন্নয়ন
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
মন্তব্যঃ
পরিশেষে বলতে পারি আপনি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে জানতে পেরেছেন বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। এছাড়াও দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে রাজনৈতিক কারণ অসাধু ব্যবসায়ীদের গুদামজাতকরণ এছাড়া আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আপনারা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন।
তাই আমার আর্টিকেলটি পড়ার পরে যদি আপনাদের একটুও ভালো লেগে থাকে। আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দেবেন।
ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url