পাকা আমে কি কি পুষ্টিগুণ আছে ও এর উপকারিতা
প্রিয় পাঠক আম খেতে কেনা ভালবাসে। আম একটি জনপ্রিয় ফল যা সবার কাছেই অনেক প্রিয়। আপনার অনেকে জানতে চেয়েছেন পাকা আমে কি কি পুষ্টিগুণ আছে ও এর উপকারিতা সম্পর্কে।
আমি আপনাদেরকে আমার এই আর্টিকেলে পাক আমি কি কি পুষ্টিগুণ আছে ও এর উপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরেছি। আপনারা যদি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে অবশ্যই আম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ভূমিকাঃ
আমাদের দেশে গ্রীষ্মের সময় আম পাওয়া যায় আম খুবই সুস্বাদুকর ও পুষ্টিকর একটি ফল। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। আমপ্রিয় মানুষ নাই এটা মনে হয় না প্রত্যেকে আম খেতে ভালোবাসে। আম আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।
এছাড়া শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকা আমে কি কি পুষ্টিগুণ আছে ও এর উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পাকা আমে কি কি পুষ্টিগুণ আছে ও এর উপকারিতাঃ
পাকা আমি কি কি পুষ্টিগুণ আছে সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
পাকা আমে প্রোটিনের মাত্রা অনেক বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আমে রয়েছে ২৭৪০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন। এতে ১.৩ গ্রাম আয়রন, ১৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৬ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ১৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, 0. ৯ মিলিগ্রাম ভিভো ভিভো রিভোফ্লেলেভিন এবং 0.0৮ মিলিগ্রাম থায়ামিন থাকে।
এছাড়া পাকা আমা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ০.৫ গ্রাম খনিজ লবণ থাকে। এছাড়া ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি৬ রয়েছে।
এই আমে আছে এমাইনো এসিড, পটাসিয়াম ও কপার। আমে থাকা বিটা ক্যাটারি্ন, লুসিয়ান জিলাইক অ্যাসিড, ক্যাফিক অ্যাসিড ইত্যাদি ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এতে কিছু পরিমাণ ফ্যাট ও প্রোটিন থাকে।
যেমন প্রতি ১০০ গ্রাম প্রোটিন এবং ০.৭ গ্রাম ফ্যাট থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ২০ গ্রাম শ্বেতসার পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ ডাবের পানির উপকারিতা
পাকা আম এর উপকারিতাঃ
আম একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । পাকা আমের উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ত্বকের যত্নে
পাকা আম আমাদের ত্বককে সুন্দর, উজ্জ্বল ও মসৃন করে গড়ে তোলে। এটি আমাদের ত্বকের ভেতরে ও বাইরের থেকে উভয়ভাবে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া আমাদের ত্বকের লোমের গোড়া পরিষ্কার রাখাতে সাহায্য করে। এছাড়া ব্রণের সমস্যার সমাধান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই পাকা আম।
চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। ভিটামিন এ আমাদের চোখের জন্য খুবই উপকারী। এতে আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে।
হার্টের সমস্যা দূর করে
আমে রয়েছে বেটাক্যারোটিন ভিটামিন ই এবং সেলিনিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। যা হার্টের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং আমাদের হার্টকে সুস্থ সবল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হজমে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া আ্মে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম এটা আমাদের শরীরের প্রোটিন অণুগুলো ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে। যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
আমে রয়েছি প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এছাড়া স্তন্য, লিউকেমিয়া, কোলন পোস্টেড ক্যান্সারের মতো ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে ।এতে প্রয়োজনীয় এনজাইম পাওয়া যায়।
দাঁত ও হাড়ের যত্নে
আমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ।পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমের ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেশি থাকে। যার কারণে আমাদের দাঁত ও হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ভালো ঘুমের সহায়ক
আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স রয়েছে । ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আমাদের শরীরের স্নায়ুগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখে এবং আমাদের শরীরকে রাখে পুরোপুরি সতেজ। যার ফলে ভালো ঘুমের সহায়তা করে।
আরো পড়ুনঃ সকালে কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
পাকা আমের অপকারিতাঃ
পাকা আমে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এটি ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হন তবে আপনাকে অবশ্যই আম খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আম অনেক সুস্বাদু ফল হওয়ার কারণে অনেকেই আম একের পর এক খেতেই থাকে। তবে জানেন কি অতিরিক্ত আম খাওয়া আপনার ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। আম প্রচুর আঁশযুক্ত ফল যা অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়ার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
আমের ভেতর ইউরেশিয়াল নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এই রাসানিক পদার্থ অনেকের শরীরে এলার্জি তৈরি করতে পারে। এর ফলে এলার্জি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর রাসায়নিকের ফলে ত্বকের সমস্যা যেমন ত্বক ফুলে ওঠা ফোসকা হওয়া এবং চুলকানি হতে পারে।
যারা বেশি পরিমাণে আম খেয়ে থাকেন তাদের বদহজম হতে পারে। তবে এটা মনে রাখবেন কাঁচা আম খেলে বদহজমের সমস্যা বেশি হয়। আমরা জানি ফলের রাজা আম আর আ্মে ক্যালোরির পরিমাণও অনেক বেশি যা আপনার ওজন বাড়াতে দ্রুত সহায়তা করতে পারে।
একটি মাঝারি আকারের আমের প্রায় ১৫০ ক্যালোরি থাকে। সুতরাং আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে অতিরিক্ত আম খাওয়া থেকে আপনাকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে ,আম শরীরের উত্তাপ বাড়িয়ে তোলে তাই গরমের সময় অতিরিক্ত পরিমাণে আম খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
আয়ুর্বেদের মতে আম কখনো দুধের সঙ্গে খাওয়া ঠিক নয় । এটি আপনার বদহজম ডায়রিয়া সহ পেটের নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বাত জনিত সমস্যায় যারা ভুগছেন সেসব রোগীরা খুব কম পরিমাণে আম খাবেন।
অতিরিক্ত আম খেলে সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই আম খাওয়ার উপকারিতা যেমন আছে এর অপকারিতাও আছে । তাই আমাদেরকে বুঝেশুনে আম খেতে হবে।
কাঁচা আমের উপকারিতাঃ
গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে পারে আপনাকে কাঁচা আমের শরবত। কেউ আবার সরাসরি কিংবা চাটনি দিয়েও কাঁচা আম খেতে পারেন। অনেকে হয়তো জানেন না যে কাঁচা আম শুধু স্বাদ নয় গুণেও অতুলনীয়। কাঁচা আম খেলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায় তা নিচে আলোচনা করা হলো।
গরম থেকে রক্ষা করে
প্রচন্ড তাপের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আপনার শরীরকে রক্ষা করতে বেশ কার্যকর কাঁচা আম। কাঁচা আম হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। দেহে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও আইরনের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
কাঁচা আমে ভিটামিন সি ভিটামিন ই ও একাধিক পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে এই উপাদান গুলোই শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
চোখের সমস্যা দূর করে
কাঁচা আমে আছে প্রচুর পরিমানে লুটেইন ও জিয়াজ্যান্থিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেটি চোখের রেটিনার স্বাস্থ্য রক্ষায় খুবই উপকারী। পাশাপাশি কাঁচা আমের আছে ভিটামিন এ যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পেটের সমস্যা দূর করে
এসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদ হজমের সমস্যা কমাতে কাঁচা আমের উপকারিতা অনেক। এখনো গ্রামীণ এলাকায় এসিডিটির সমস্যা কমাতে কাঁচা আম চিবিয়ে খাওয়া হয়।
আম খাওয়ার নিয়মঃ
আম খেতে কেনা পছন্দ করে আম একটি লোভনীয় ফল। যা খেতে সবারই ভালো লাগে। তবে এই ফল এত সুস্বাদু যা খেতে লাগলে শুধু খেতেই মন চায়। তবে সবকিছুই একটা নিয়ম আছে। যেমন কোন কিছুই খুব বেশি খাওয়া ভালো না আসুন জেনে নেই আম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আম দই একসাথে খাবেন না
আমরা অনেকেই দই এর সঙ্গে আম মিশিয়ে খাই ।মূলত ফালুদার মতোই রেসিপি বানিয়ে খাওয়ার একটি প্রচলন আছে। তবে এ দুটি খাবার একসঙ্গে খাওয়া ক্ষতিকর। আমে কিছু উপাদান আছে যা দইয়ের সঙ্গে বিক্রিয়া করে হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। গ্যাস তো হয়ই আবার ত্বকের ও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আম খেয়ে পানি পান করা যাবে না
কাঁচা আম খেয়ে অনেকেই সঙ্গে সঙ্গে পানি খেয়ে ফেলেন। পাকা আমের ক্ষেত্রেও একই রকম ভুল করেন। আমের উপাদান হজম হতে অনেকটা সময় লাগে যা শরীরে মিশতেও সময় লাগে। আম খাওয়ার আধা ঘন্টা আগেই পানি পান করে নিবেন। আম খাওয়ার পর পানি পান করলে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
আম খাওয়ার আগে ভিজিয়ে রাখুন
আম বাজার থেকে কিনে আনুন বা নিজেদের গাছ থেকেই পাড়ুন। আম খাওয়ার আগে ভিজিয়ে রাখুন। বিশেষকরে আম খাওয়ার আগে ভিজিয়ে রাখাটাই ভালো। আমে থাকা ফাইট্রিক এসিড শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। এটি পেটে এসিডের সমস্যা বাড়াতে পারে তাই আম খাওয়ার ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখাটাই ভালো।
রাতের খাবারের পর আম খাওয়া উচিত নয়
আমরা জানি আম এমনিতেই খুব ভারি ফল। রসালো হলেও এই ফল বেশ ভারী আমে ক্যালরির মাত্রা অনেক বেশি থাকে। সে কারণে রাতের খাবারের পর আম খাওয়া উচিত নয়।
অতিরিক্ত ক্যালরি হজমে সমস্যা করতে পারে তাছাড়া ওজন বাড়ার একটা ভয়ও থাকে। বিকেলে বা সন্ধ্যায় আম খেতে পারেন। এছাড়া সকালের নাস্তা সঙ্গে আম খেতে পারেন কিন্তু রাতের খাবারের পরে আম খাওয়া উচিত নয়।
মন্তব্যঃ পাকা আমে কি কি পুষ্টিগুণ আছে ও এর উপকারিতা।
পরিশেষে বলতে চাই আপনারা আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন। পাকা আমে কি কি পুষ্টিগুণ আছে ও এর উপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি উপকৃত হয়েছেন।
আমার আর্টিকেলটি পড়ার পরে যদি আপনাদের একটুও ভালো লেগে থাকে। তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুর সাথে শেয়ার করবেন। হয়তো তারাও উপকৃত হবে।
ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url