গ্যাস্ট্রিক দূর করার প্রাকৃতিক উপায় ও গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম





প্রিয় পাঠক আপনার অনেকেই জানতে চেয়েছেন গ্যাস্ট্রিক দূর করার প্রাকৃতিক উপায়। বর্তমান সময়ে আমরা আমাদের খাবারের অনিয়মের কারণে গ্যাস্ট্রিকের বিভিন্ন সমস্যাই পড়ে থাকি। এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা ডাক্তারের কাছে শরণাপন্ন হই । এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের গ্যাসের ওষুধ খেয়ে থাকি।

গ্যাস্ট্রিক দূর করার প্রাকৃতিক উপায়

তার পরেও সমস্যা থেকেই যায়। তবে আমরা একটু সচেতন হলেই এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার পরে আপনারা বুঝতে পারবেন। গ্যাস্ট্রিক দূর করার প্রাকৃতিক উপায় ও গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।

ভূমিকাঃ

বর্তমানে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ঘরে ঘরে আর কোন ওষুধ পাওয়া না গেলেও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ঠিকই পাওয়া যায়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হওয়ার পেছনের মূল যে সমস্যাটা সেটা হচ্ছে খাবারের সমস্যা।

আমরা নিজেরাই একটু সচেতন হলেই গ্যাস্টিকের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। আসুন জেনে নিই গ্যাস্ট্রিক দূর করার প্রাকৃতিক উপায় ও গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম। অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি করনীয়।পেটে গ্যাস হলে কি শ্বাসকষ্ট হয়।

গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবেনা এ ধরনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিচে আলোচনা করা হলো । অনুগ্রহ করে আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন আশা করি উপকৃত হবেন।

গ্যাস্ট্রিক দূর করার প্রাকৃতিক উপায়ঃ

বর্তমানে গ্যাসের সমস্যা নেই এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাবারের সামান্য অনিয়মের কারণেই আমাদের অনেককে এই গ্যাসের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর এই সমস্যা হতে হতে একসময় বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় যার পরিণতি আলসার।

আমরা যখন কোন খাবার খাই বা পান করি সে সময় আমাদের শরীরে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন প্রবেশ করে। এছাড়া আমাদের পরিপাকতন্ত্রের খাদ্য হজম হওয়ার সময় হাইড্রোজেন, মিথেন বা কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর মত গ্যাস নির্গত হয়ে পেটে জমা হয়।

এগুলোর কারণেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি হয়। আপনি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিজেই করতে পারেন। আসুন জেনে নিই গ্যাস্ট্রিক দূর করার প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

পর্যাপ্ত পানি পান করা

গ্যাসের সমস্যা দূর করার জন্য আপনাকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অনেক রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। তাই প্রতিদিন নিয়মিত অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে আপনি গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

আদা খেতে পারেন

পেটের গ্যাসের সমস্যা সমাধানের জন্য সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উপাদান হচ্ছে আদা। আপনি আদা দিয়ে চা খেতে পারেন তাহলে গ্যাসের সমস্যা অনেকটা দূর হয়ে যাবে।

এছাড়া আরো ভালো ফলাফল যদি পেতে চান তাহলে আদার সঙ্গে লেবুর রস বা মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি আপনার গ্যাসের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি বদহজমও দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

পুদিনা পাতা খেতে পারেন

পুদিনা পাতা গ্যাসের সমস্যা সমাধানের জন্য আরেকটি প্রাকৃতিক উপাদান এবং খুব বেশি কার্যকরী । পুদিনা পাতা আপনার বমি বমি ভাবও দূর করতে পারে । আপনি যদি প্রচুর পরিমাণে গ্যাসের সমস্যায় ভুগে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনি অল্প পরিমাণে পুদিনা পাতা মুখে নিয়ে ভালো করে চিবালেই গ্যাসের সমস্যা কমে যাবে।

পেঁপে খেতে পারেন

পেপেতে রয়েছে পাপায়া নামের এনজাইম যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলে গ্যাসের সমস্যা অনেকটা কমে যাবে। তাই আপনি নিয়মিত পেঁপে খেতে পারেন।

লবঙ্গ খেতে পারেন

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, লবঙ্গে উপস্থিত একাধিক উপকারী উপাদান শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই গ্যাসের সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। তাই আপনার যদি বেশি মাত্রায় বুক জ্বালা ও ঢেকর উঠে তাহলে দুই একটি লবঙ্গ খেয়ে নিবেন। দেখবেন অনেকটাই গ্যাসের সমস্যা থেকে আরাম পাবেন।

ডাবের পানি খেতে পারেন

ডাবের পানি খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এছাড়া গ্যাসের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। যদি আপনি নিয়মিত ডাবের পানি খেলে শরীরের পানিশূন্যতাও দূর করে। আপনি নিয়মিত ডাবের পানি খান তাহলে দেখবেন আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে। তাই নিয়মিত ডাবের পানি খাবেন।

অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি করনীয়ঃ

গ্যাসের সমস্যা হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে খাবারের সমস্যা। তাই বুঝে শুনে খাবার খেতে হবে। যে সকল খাবার খেলে আপনার গ্যাসের সমস্যা হয় সেগুলো খাওয়া বাদ দিতে হবে । তবে আপনি ভালো থাকবেন । অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি করনীয় এ সম্পর্কে নিচে দেওয়া হল।

শসা খেতে পারেন

পেটের অতিরিক্ত গ্যাস দূর করার জন্য ও পেটকে ঠান্ডা রাখতে আপনি নিয়মিত শসা খেতে পারেন। শসায় আছে ফ্লেভানএড ও এন্টি ইনফ্লেমেটরী উপাদান। এসব উপাদান গ্যাস দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঠান্ডা দুধ খেতে পারেন

আপনার যদি পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা হয় সে ক্ষেত্রে আপনি ঠান্ডা দুধ খেতে পারেন। এটি একটি কার্যকরী উপায় ঠান্ডা দুধ পাকস্থলের গ্যাস্ট্রিক এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া নিয়মিত টক দই খেলেও এ সমস্যা দূর হয়ে যায়।

পুদিনা পাতা খেতে পারেন

আপনার যদি পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা হয় সে ক্ষেত্রে আপনি পুদিনা পাতা খেতে পারেন। বিশেষ করে চার থেকে পাঁচটি পুদিনা পাতা পানিতে ফুটিয়ে খেতে পারেন। এতে পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর হবে এবং বমি হবে কেটে যাবে।

কলা ও কমলা খেতে পারেন

পেটে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আপনি কলা ও কমলা খেতে পারেন। এ দুটি ফল পাকস্থলীর অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সাহায্য করে। ফলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেশ উপকারী।

পেটে গ্যাস হলে কি শ্বাসকষ্ট হয়ঃ

পেটে গ্যাস হলে কি শ্বাসকষ্ট হয়? এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে পেটে গ্যাস হলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা যায় এবং অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা থাকলে বুক ধরফর করার মত সমস্যা দেখা যায়। পেটে গ্যাস হলে রাতের বেলা শ্বাসকষ্ট সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।

তাই আপনার উচিত হবে পেটের গ্যাস দূর করা।আপনি যদি অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খান বা কোথাও মেহমান হিসেবে গিয়ে অতিরিক্ত খাবার খান। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই গ্যাসের ওষুধ খাবার আগে খেয়ে নিতে হবে।

মনে রাখবেন অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা হলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে। এ শ্বাসকষ্টের সমস্যা এত বেশি হয়ে থাকে যে আপনার অস্থিরতার মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

তাই আপনার উচিত হবে অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা হইলে গ্যাসের ওষুধ খেয়ে নিতে পারেন। তাহলে আপনি অনেকটা আরাম পাবেন এবং সমস্যা দূর হবে।

গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে নাঃ

আপনার যদি অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা থেকে থাকে। তাহলে আপনাকে বুঝে শুনে খাবার খেতে হবে এবং খাওয়া-দাওয়ার প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে। আসুন জেনে নেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে না।

ডাল জাতীয় খাবার

ডাল, বুট, ছোলা ও সয়াবিন ইত্যাদি ধরনের খাবার গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার। এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, সুগার ও ফাইবার। যা সহজে হজম হয় না ফলে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই যাদের খুব বেশি গ্যাসের সমস্যা আছে তারা এগুলো খাওয়া বাদ দিবেন।

ব্রকলি, বাঁধাকপি

ব্রকলি, বাঁধাকপি এ ধরনের সবজিতে রয়েছে রাফিনোজ নামক এক ধরনের সুগার উপাদান যা পাকস্থলীর ব্যাকটেরিয়া ফার্মেন্ট না করা পর্যন্ত হয় না । এ অবস্থায় পেটে গ্যাসের সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার পর যদি দেখেন পেটে গ্যাস হচ্ছে তার অর্থ হচ্ছে আপনার হজমের সমস্যা হচ্ছে । হজম হয় না বলে এগুলো আপনার পেটে গ্যাস বৃদ্ধি করে। তাই দুগ্ধজাত খাবার আপনার পরিহার করাই উচিত।

আপেল ও পেয়ার

আপেল ও পেয়ারাতে রয়েছে ফাইবার এবং সরবিটল নামক সুগার উপাদান। যা সহজে হজম হতে চায় না। এতে করে পেটে গ্যাস সৃষ্টি হয়। তাই যাদের অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা তারা তাদের এগুলো না খাওয়াই উচিত।

লবণ জাতীয় খাবার

লবণে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। অতিরিক্ত লবণ খাবার খেলে দেহে পানি জমার সমস্যা দেখা দেয়। পাকস্থলীতেও সমস্যা শুরু হয় ও খাবার হজম হতে চায় না। তাই অতিরিক্ত লবণ খাবার পরিহার করতে হবে।

গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়ামঃ

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য শারীরিক ব্যায়াম খুবই কার্যকরী। পেটে গ্যাস হলে কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম রয়েছে যেগুলো করলে এই সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও আরাম পাওয়া যায়।


বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী শারীরিক ব্যায়াম পেটের গ্যাস দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেট ফাঁপা বা পেট ব্যথা থাকলে শারীরিক ব্যায়াম করার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়ামগুলো হলো।

পেট মেসেজ করা

আপনি যদি পেট ফাঁপা ফাঁপা অনুভব করেন তাহলে পেট মেসেজ করতে পারেন। ধীরে ধীরে পেট মেসেজ করতে থাকূণ। পেটের ওপর উপরিভাগ মেসেজ করুন ডান হাত থেকে ডান দিকে বুকের খাঁচার হাড়ের নিচে দিকে ধরুন।

এরপর গোল ভাবে মেসেজ করুন এভাবে পেট মেসেজ করতে পারলে গ্যাস আপনার পেটের নিচের দিকে চলে আসবে এবং বায়ুদারের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে।

নিয়মিত হাটাহাটি করুন

গ্যাসের সমস্যা দূর করার আরেকটি ভালো উপায় হল নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা। হাঁটাহাঁটি করাটা হচ্ছে একটি ব্যায়াম । নিয়মিত হাটার অভ্যাস থাকলে আপনার গ্যাসের সমস্যা অনেকটা কমে যাবে। নিয়মিত হাটাহাটি শুধু গ্যাসের সমস্যা নয় আরো অনেক সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

যোগ ব্যায়াম করুন

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে পেট ফাঁপা গ্যাসের সমস্যা অনায়াসে কমিয়ে দিতে পারে যোগ ব্যায়াম। হালকা এক্সারসাইজ করার ফলে পেটের পেশির ব্যায়াম হয়।
 
এছাড়াও পেট ঠিকমতো কাজ করতে পারে। যার ফলে পেট থেকে বেরিয়ে যেতে থাকে গ্যাস। কিছুক্ষণ ধরে ব্যায়াম করার পরে আপনি ফলাফলটি বুঝতে পারবেন।

লেখকের মন্তব্যঃ

অবশেষে বলতে চাই আমার এই আর্টিকেলটি আপনারা পড়ার পরে বুঝতে পেরেছেন যে, এখানে গ্যাস্ট্রিক দূর করার প্রাকৃতিক উপায় ও গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম। এছাড়া আরো বিভিন্ন ধরনের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধান সম্পর্কে আপনারা অবগত হয়েছেন।

আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি একটু ভালো লেগে থাকে আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন। হয়তো তারাও এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে।

ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url