কিভাবে ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা পাবে

 কিভাবে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন করা যায়

প্রিয় পাঠক আমরা অনেকেই সজনে পাতা চিনে থাকি কিন্তু সজনে পাতায় এতগুণ যা আমরা অনেকেই জানিনা। বর্তমানে ঘরে ঘরে ডায়াবেটিস। তাই আমার আর্টিকেলের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে কিভাবে ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা পাবে।

কিভাবে ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা পাবে

এ সম্পর্কেই আমি আমার এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি । আপনারা যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে অবশ্যই আপনারা উপকৃত হবেন আশা করি।

ভূমিকাঃ

আমরা সবাই চিনে থাকি কিন্তু সজনে পাতার যে এত গুণ তা আমরা অনেকেই জানিনা। সজনে পাতা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া সজনে পাতা আমাদের ডাইবেটিস রোগের জন্য বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

এছাড়া সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম। সজনে পাতা আমরা বিভিন্ন ভাবে খেয়ে থাকি। বর্তমানে সজনে পাতায় যে এত উপকার। আপনারা যদি আমার এই আর্টিকেলটি পড়েন তাহলে এ সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন।

আসুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁচা সজনে পাতা উপকারিতা পাবে সে সম্পর্কে নিচে দেওয়া হলো।

আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন গাজর খাওয়ার উপকারিতা

কিভাবে ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা পাবেঃ

সজনে একটি অতি পরিচিত সদস্যি সুজনের ইংরেজি নাম Drumstic এবং বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা। এটির উৎপত্তিস্থল হচ্ছে পাক ভারত উপমহাদেশ। এই সজনে গাছ শীত প্রধান দেশছাড়া পৃথিবীর সব দেশেই জন্মে। বর্তমানে ১২ মাসে সাজনের জাত পাওয়া যায়।

যা সারা বছরই সজনে দিয়ে থাকে। আমাদের দেশে দুই তিন প্রকারের সজনে পাওয়া যায়। সজনে এবং সজনে পাতা দুটোই আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আসুন জেনে নেই কিভাবে ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা পাবে এ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
  • সজনে পাতাতে রয়েছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • সজনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণে এসকরবিক এসিড থাকে। যা শরীরে ইনসুলিন মিশ্রণ বাড়ায়। যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • রক্তে সব শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সজনে পাতাতে থাকে ক্লোরোজেনিক এসিড। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে খাবারের সঙ্গে ৫০ গ্রাম সজনে পাতা যোগ করলে রক্তে শর্করার বৃদ্ধির পরিমাণ ২১% কমে যায়।
এছাড়া সাজানো পাতায় আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। সজনে পাতাতে নানা গুনাগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। লেবু থেকে সাত গুণ পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে এই সজনে পাতায়।

যা আমাদের দেহের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।সজনে পাতাতে দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে। এছাড়াও ডিম থেকে প্রায় দুই গুণ বেশি প্রোটিন রয়েছে এই সজনে পাতায় যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী।

 এছাড়াও গাজর থেকে রয়েছে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ যা আমাদের অন্ধত্ব সমস্যা দূর করতে এ সজনে পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সজনে পাতা শত বছর ধরে প্রায় ৩০০ এর বেশি রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে আসছে। সজনে পাতার রস শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এছাড়া সজনে পাতা ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশা এবং জন্ডিসের সময় ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

সজনে পাতা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজমের শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই সজনে পাতা।

সাজনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। এছাড়াও কলা থেকে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম রয়েছে। শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার জন্য সজনে পাতা দারুন উপকারী।

ডায়াবেটিস রোগীরা সাজনা পাতা খাবেন কিভাবে

সজনে পাতা আপনি শুকিয়ে গুড়া করে সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন । পরে আপনি চায়ের পাতার মতো করে এটি ব্যবহার করতে পারবেন অথবা গরম পানিতে দিয়ে আপনি চায়ের মত করে খেতে পারবেন।
  •  সজনে পাতা পানিতে গরম করে চায়ের মত করে খাওয়া যায়।
  • আপনি নিয়মিত সজনে পাতা খেলে আপনার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কম হবে এবং ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সজনে পাতা অনেক উপকারী।

সাজনা পাতার অপকারিতাঃ

সজনে পাতা যেরকম উপকার আছে তেমনি তার কিছু অপকারিত রয়েছে।
যেমনঃ
  •  যাদের ব্লাড প্রেসার রয়েছে তাদের সজনে পাতার গুড়া খাওয়া যাবেনা। কারণ এটি খেলে ব্লাড প্রেসারের মাত্রাটা অনেক কমে যায়। যা আপনার জন্য অনেক ক্ষতিকর হতে পারে।
  • সজনে পাতার গুড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা খেলে ক্ষুধা কম লাগে আর এর ফলে আপনার গ্যাসের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
  • সজনে পাতা পরিমাণ মতো খেতে হবে। যদি অতিরিক্ত পেতাম আমরা খেয়ে থাকি তাহলে আমাদের ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
  • আমরা সজনে পাতা খাব তাই বলে আমরা সজনে পাতার সাথে ডাল খাব না। যদি আমরা সজনে পাতার সাথে সজনে পাতার ডালও খায় তাহলে সে ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি।

সজনে পাতা খাওয়ার নিয়মঃ

আমরা সজনে পাতাকে বিভিন্নভাবে খেতে পারি। কেউ  সজনে পাতাকে জুস হিসেবে খেতে পারি কেউবা সজনে পাতাকে ভর্তা হিসেবে খেতে পারি আবার কেউবা সজনে পাতাকে শুকিয়ে চা হিসেবেও খেতে পারি। আপনি যদি সাজনা পাতাকে জুস হিসেবে খেতে চান।

তাহলে আপনাকে প্রথমে সজনে পাতা নিয়ে খুব সুন্দর ভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এবং এই পাতাগুলো আপনি ব্লন্ডারে দেবেন তারপরে সেখানে কিছু পানি দেবেন। এর সাথে আপনি আদা, জি্রা, বিট লবনও দিতে পারেন।

তারপর এটি ভালো করে ব্লেন্ড করবেন তারপরে ছেঁকে নিবেন। জুস খাওয়ার সময় একটু মধু দিয়ে যদি খেতে পারেন তাহলে দেখবেন জুসটি আপনার কাছে অনেক তৃপ্তময় হবে। এছাড়া আপনি সজনা পাতা ভর্তা করেও খেতে পারেন।

কাঁচা সজনে পাতা আপনি ভালো করে বেটে এর সাথে টেস্ট করার জন্য আপনি আদা, রসুন, মরিচ, পেঁয়াজ এবং যা যা দিলে টেস্ট হয় আপনি সেগুলো যোগ করে নিয়ে এটি ভর্তা করে খেতে পারেন। যা আপনার শরীরের জন্য অনেক উপকারী হবে।

এছাড়া সজনে পাতা আপনি অফ সিজনে গুড়া করে রাখতে পারেন। গুড়া করার জন্য আপনাকে সজনে পাতা ভালো ভাবে রৌদ্রে শুকাতে হবে। তারপর এটাকে সুন্দরভাবে গুড়া করতে হবে। গুড়া করে আপনি এটা ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখতে পারবেন।

আপনি এটি অফ সিজনে প্রতিদিন যদি এক চামচ করে সকালে ও এক চামচ করে রাত্রে খেতে পারেন। তাহলে দেখবেন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি অনেক স্ট্রং হবেন।

সজনে পাতার রসের উপকারিতাঃ

  সজনে পাতার রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। বিভিন্ন রোগে সজনে পাতার রস ব্যবহৃত হয়। এছাড়া আরো অনেক উপকার আছে।যেমনঃ

  •  শ্বাসকষ্ট দূর করতে সজনে পাতার রস খাওয়া হয়।
  •  সজনে পাতার রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
  •  মাথার খুশকি কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
  •  সজনে পাতার রস হজম শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
  • এছাড়া কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেকাংশেই কমাতে সাহায্য করে এই সজনে পাতার রস।

এ সকল উপকার ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের উপকার হয়ে থাকে এই সজনে পাতার রসে।

সজনে পাতার গুড়া করার নিয়মঃ

যখন সজনে পাতার সিজন থাকবে ঠিক সে সময় সজনে পাতা সংগ্রহ করে ডাল থেকে পাতাগুলো ছাড়াতে হবে। তারপর পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর আপনি সজনে পাতাগুলো রোদে শুকাতে দিবেন।

 শুকানোর পর এটাকে ব্লেন্ড করতে হবে। ব্লেন্ড করার পরে এটা যখন গুড়া হয়ে যাবে তখন আপনি এটা ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রেখে দিতে পারবেন। এবং সারা দিনের যে পুষ্টি  দরকার তা আপনি সজনে পাতার গুড়া থেকেই পাবেন।

যদি আপনি প্রতিদিন এক চামচ সকালে ও এক চামচ রাত্রে সজনে পাতার গুড়া খেতে পারেন। তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং শরীরের আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করতে সজনে পাতার গুড়া কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

মন্তব্যঃ

অবশেষে বলতে চাই যে, আমার এই আর্টিকেলটি আপনার ইতিমধ্যে পড়েছেন এবং জানতে পেরেছেন। কিভাবে ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা পাবে এ সম্পর্কে। সজনে পাতা খাবার নিয়ম, উপকারিতা আরও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন।

তাই আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনাদের একটুও ভালো লেগে থাকে। আপনারা অবশ্যই আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন হয়তো তারা উপকৃত হবে।

 ধন্যবাদ।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url