কিভাবে বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করা যায় ও বিকাশ এজেন্ট কমিশন কত
প্রিয় পাঠক আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন কিভাবে বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করা যায় ও বিকাশ এজেন্ট কমিশন কত। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমার এই আর্টিকেলে। আপনারা যদি আমার আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়েন।
তাহলে অবশ্যই কিভাবে বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করা যায় ও বিকাশ এজেন্ট কমিশন কত। এ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন এবং উপকৃত হবেন। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকাঃ
বর্তমান সময়ে বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেছে। এই ব্যবসা করে অনেকেই প্রচুর টাকা আয় করছে । আপনি যদি বিকাশ এজেন্ট এর মাধ্যমে ব্যবসা করতে চান। তাহলে এর জন্য আপনাকে আপনার প্রয়োজনিয় কিছু কাগজপত্র লাগবে।
এছাড়া আপনি যেখানে ব্যবসা করবেন সেখানে ব্যবসা করার জন্য আপনার একটি স্থান লাগবে অর্থাৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আপনি আপনার অন্যান্য ব্যবসার সাথে বিকাশ এজেন্টের ব্যবসাও করতে পারবেন।
যা আপনার বাড়তি আয় করতে সহায়তা করবে। কিভাবে বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করা যায় ও বিকাশ এজেন্ট কমিশন কত এ সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।
কিভাবে বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করা যায় ও বিকাশ এজেন্ট কমিশন কত
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে বিকাশ। বিকাশের মাধ্যমে খুব সহজেই লেনদেন করা যায়। যা শহর থেকে গ্রাম সবাই খুব সহজেই বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারে। মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে বিকাশকে সকলেই চিনে থাকে।
আপনি যদি বিকাশে ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে অবশ্যই এর জন্য কিছু নিয়ম কানুন আপনাকে মানতে হবে। এছাড়া বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করতে গেলে আপনার কিছু মূলধনেরও প্রয়োজন। বিকাশ একাউন্ট করতে কত টাকা লাগে তা আমরা অনেকেই জানিনা।
বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করে খুব সহজেই দ্রুত সফলতা অর্জন করা যায় এবং প্রচুর টাকা ইনকাম করা যায়। আর বিকাশে ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে অবশ্যই বিকাশ এজেন্টের ব্যবসায় করতে হবে। আসুন জেনে নেই বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করার জন্য আমাদেরকে কি কি করতে হবে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আরো পড়ুনঃ ২০২৪ সালের বাংলাদেশের লাভজনক ১৫টি ব্যবসা
বিকাশ এজেন্ট কমিশন নির্ভর করে ব্যবসার উপর। আপনার ব্যবসা কেমন হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে আপনি বিকাশ এজেন্টের কমিশন পেতে পারেন। আসুন সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কমিশন নির্ধারণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- লেনদেনের পরিমাণ: সাধারণত লেনদেনের পরিমাণ যত বেশি হবে, কমিশনের হারও তত বেশি হতে পারে।
- লেনদেনের ধরন: বিভিন্ন ধরনের লেনদেনের জন্য কমিশনের হার আলাদা হতে পারে। যেমন, ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, বিল পরিশোধ ইত্যাদির জন্য কমিশন ভিন্ন হতে পারে।
- বিকাশের সঙ্গে সম্পর্ক: আপনি বিকাশের সঙ্গে যতদিন ধরে কাজ করবেন এবং যত বেশি লেনদেন করবেন, তত বেশি সুবিধা এবং কমিশনের হার পেতে পারেন।
- বিকাশের বিভিন্ন অফার: বিকাশ মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন অফার এবং ক্যাম্পেইন চালায়, যেখানে এজেন্টদের বিশেষ কমিশনের সুযোগ দেওয়া হয়।
কমিশন জানার সঠিক উপায়:
- বিকাশের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট: বিকাশের ওয়েবসাইটে এজেন্টদের জন্য বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
- বিকাশের অ্যাপ: বিকাশের অ্যাপে লগ ইন করে আপনি আপনার কমিশনের বিস্তারিত তথ্য দেখতে পারবেন।
- বিকাশের কাস্টমার কেয়ার: বিকাশের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে আপনি আপনার কমিশন সম্পর্কিত যেকোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন।
তবে বিকাশ এজেন্ট কমিশন পরিবর্তন হতে পারে যে কোন সময়। এছাড়া ব্যবসার উপরও বিকাশ এজেন্ট কমিশন দেয়া হয়।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়মঃ
আপনি যদি বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করতে চান। তাহলে আপনাকে অবশ্যই বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে হবে এবং বিকাশের এজেন্ট হতে হবে। বিকাশ এজেন্ট হওয়ার জন্য আপনাকে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে।যেমনঃ
- বিকাশে এজেন্ট হওয়ার জন্য আপনাকে একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে।
- আপনি আপনার এলাকায় বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে গিয়েও ফরম পূরণ করতে পারবেন।
- ফরম পূরণ করার জন্য আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র/ ড্রাইভিং লাইসেন্স/ জন্ম নিবন্ধন/ পাসপোর্ট এগুলো যে কোন একটি ফটোকপি হলেই হবে।
- মোবাইল নাম্বার অথচ যে সিমে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের বিকাশ একাউন্ট হয়নি এ ধরনের মোবাইল নাম্বার লাগবে।
- আপনার দোকানের ট্রেড লাইসেন্স লাগবে।
- আপনার পরিপূর্ণ ঠিকানা দিতে হবে।
- আপনার সাথে যোগাযোগের জন্য একটি নাম্বার দিতে হবে।
- আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম দিতে হবে।
- টিন সার্টিফিকেট এর ফটোকপি দেওয়া লাগবে।
- আবেদনকারী হিসেবে আপনার তিন কপি ছবি দেওয়া লাগবে।
বিকাশের এজেন্ট হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই এই সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া লাগবে।
বিকাশ এজেন্ট হতে কত টাকা লাগেঃ
বিকাশ এজেন্ট এর ব্যবসা করতে গেলে কত টাকা লাগে এ বিষয় নিয়ে অনেকে চিন্তিত। প্রকৃতপক্ষে বিকাশ এজেন্ট হতে হলে কোন টাকাই লাগে না। অর্থাৎ আপনি একটি বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন ফ্রি করতে পারবেন।
তবে আপনার কাছে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকতে হবে। তবে বিকাশ কর্তৃপক্ষ আপনার কাছে একটি প্রতিষ্ঠান এবং ঐ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আপনার ভোটার আইডি কার্ড থাকলে সহজে আপনি বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
কারণ বিকাশ এজেন্ট হতে কোন প্রকার টাকা প্রদান করতে হয় না বিকাশ কর্তৃপক্ষকে। শুধুমাত্র কাগজপত্র ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে বিনামূল্যে বা ফ্রিতে আপনি একটি বিকাশ এজেন্ট সিম পেতে পারেন। এবং সেই অনুযায়ী আপনি আপনার ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।
এক্ষেত্রে হয়তো অনেকে আপনারা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন যে বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করব অথচ টাকা পয়সা লাগবে না। আসলে তা না বিকাশ এজেন্টে ব্যবসা করতে আপনার কোন টাকা পয়সা লাগবে না।
তবে হ্যাঁ আপনি আপনার ব্যবসা পরিচালনার জন্য আপনার বিকাশ একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা এমাউন্ট আপনাকে রাখতে হবে। যার বিনিময়ে আপনি আপনার ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন এবং প্রচুর টাকা আয় করতে পারবেন।
এই টাকা আপনি ইনভেস্ট করতে পারেন আপনার এলাকায় বিকাশের চাহিদার উপর। সেটা হতে পারে ৫০,০০০ হাজার থেকে ১,০০০০০ লক্ষ টাকা। সেটা আপনার এলাকার ওপর নির্ভর করছে। যা আপনার এলাকায় বিকাশের লেনদেন কেমন হয় তার ওপর। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
বিকাশ এজেন্ট কমিশন কতঃ
বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করবেন অথচ জানবেন না যে বিকাশ এজেন্টের কমিশন কত। আসুন জেনে নিই বিকাশ এজেন্টের কমিশন কত এ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো।
এজেন্ট একাউন্ট এর মাধ্যমে।
আপনি যদি এজেন্ট একাউন্টের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করেন। তাহলে প্রতি ১০০০ টাকা লেনদেন করলে আপনি ৪ টাকা ১০ পয়সা কমিশন পাবেন। আপনি লেনদেনটা ক্যাশ ইন অথবা ক্যাশ আউট যেভাবেই হোক না কেন। আপনি প্রতি ১০০০ টাকায় ৪ টাকা ১০ পয়সায় কমিশন পাবেন।
অর্থাৎ এক লক্ষ টাকা যদি লেনদেন হয় সে ক্ষেত্রে আপনি ৪১০ টাকা কমিশন পাবেন। এছাড়া আপনি যদি একটি পার্সোনাল একাউন্ট খুলে দেন তাহলে আপনি আরো ৫০ টাকা কমিশন পাবেন। এবং ওই অ্যাকাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক লেনদেন হলে আপনি কমিশন পাবেন।
এজেন্ট অ্যাপের মাধ্যমে
আপনি বিকাশ এজেন্ট অ্যাপ ব্যবহার করে বাড়তি কমিশন পেতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রতি ১০০০ টাকায় ৪ টাকা ৩০ পয়সা কমিশন পাবেন। মনে রাখবেন শুধুমাত্র আপনি অ্যাপ দিয়ে কোন ট্রানজেকশন। যেমন ক্যাশ ইন করলে অ্যাপ এর বাড়তি কমিশন পাবেন।
কিন্তু ক্যাশ আউটের ক্ষেত্রে আপনি কোন কমিশন পাবেন না। এছাড়া আপনি ৯০% লেনদেন অ্যাপের মাধ্যমে করলে আরেকটা স্পেশাল কমিশন পাবেন সেটা হচ্ছে প্রতি হাজারে ০. ২০ টাকা বাড়তি পাবেন। অর্থাৎ আপনার সর্বমোট হাজারে কমিশন পাচ্ছেন ৪ টাকা ৫০ পয়সা।
বিকাশ এজেন্ট হওয়ার শর্তঃ
বিকাশ এজেন্ট হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত আপনাকে সব সময় মেনে চলতে হবে। বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার আগে আপনি এসব শর্ত ভবিষ্যতে মেনে চলতে পারবেন কিনা তা ভেবে দেখবেন।
যদি আপনি বিকাশ এজেন্টের এ সকল শর্ত মেনে চলতে পারেন। তাহলে আপনি ব্যবসা করে ভালো মুনাফা করতে পারবেন। আসুন জেনে নিই বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট এর শর্ত সম্পর্কে।
- আপনার বিকাশ এজেন্ট একাউন্টে এক লক্ষ টাকা রিচার্জ করতে হবে।
- প্রতি মাসে ন্যূনতম পাঁচটি বিকাশ পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
- এছাড়া আপনার বিকাশ এজেন্ট একাউন্টে সর্বনিম্ন ৭ হাজার টাকা ব্যালেন্স রাখতে হবে।
- প্রতিদিন কমপক্ষে দুই হাজার টাকার লেনদেন দেখাতে হবে।
- এ সকল শর্ত পূরণ করলেই আপনি বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা সফলভাবে করতে পারবেন।
- বিকাশ এজেন্ট ব্যবসায় সাবধানতা অবলম্বনঃ
- বিকাশ এজেন্ট ব্যবসা করতে গেলে আপনার কিছু সাবধান না সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
- প্রতিটি লেনদেনের পরে আপনার ব্যালেন্স চেক করতে হবে।
- নাম্বার ভুল হচ্ছে কিনা সেটা চেক করুন।
- কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকের কাছ থেকে সঠিক কাগজপত্র বুঝে নিতে হবে যদি প্রয়োজন হয়।
- পিন নাম্বার সব সময় গোপন রাখতে হবে।
- যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি এড়িয়ে দ্রুত নিকটস্থ বিকাশ সার্ভিস পয়েন্টে যোগাযোগ করতে হবে।
মন্তব্যঃ
অবশেষে বলতে চাই আমার আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন যে। কিভাবে বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করা যায় ।এ ব্যবসা করতে কত টাকা লাগে এছাড়া এ ব্যবসার জন্য বেশ কিছু নিয়মকানুন সম্পর্কে আপনারা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন।
আপনারা যারা বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করতে চান তারা এ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আমার আর্টিকেলটি পড়ার পরে যদি আপনারা একটু উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন।
ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url