প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত ও টানা ৭ দিন কালোজিরা খেলে কি হয়





প্রিয় বন্ধুরা আপনারা অনেকে জানতে চেয়েছেন প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত ও কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে। আপনারা ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে কালোজিরা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে চেয়েছেন।

প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত


আমি এখানে কালোজিরা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনারা যদি আমার এই আর্টিকেল পড়েন তাহলে অনেক উপকৃত হবেন আশা রাখি। জানতে হলে কষ্ট করে পড়তে থাকুন।

ভূমিকাঃ

প্রাচীনকাল থেকেই কালোজিরা রান্নায় ব্যবহার হয়ে আসছে। কালোজিরা সর্ব রোগের মহা ঔষধ একমাত্র মৃত্যু ছাড়া। নিয়মিত কালোজিরা খেলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কালোজিরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

 আমরা কেউ না কেউ প্রতিদিনই কালোজিরা খায়। কিন্তু অনেকে জানিনা যে, প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত। কালোজিরা উপকারিতা এবং কি নিয়মে কালোজিরা খেতে হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।

প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিতঃ

কালোজিরা এমন একটি ভেষজ উপাদান যার পুষ্টিগুণ বলে শেষ করা যাবে না । একমাত্র কালোজিরা মৃত্যু ছাড়া সর্ব রোগের মহা ওষুধ হিসেবে কাজ করে । যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।

এছাড়া শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কালিজিরা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আমরা প্রতিদিনই তো কেউ না কেউ কালোজিরা খায় কিন্তু অনেকেই জানেনা, প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত। জেনে নিন এই সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কালোজিরা রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়া কালোজিরা হজমে উন্নতি করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ স্বাস্থ্য সুবিধাগুলো উপভোগ করতে আপনারা কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত।

এ প্রশ্নের কোন উত্তর নেই, কারণ আপনি যে পরিমাণ কালোজিরা গ্রহণ করবেন তা আপনার বয়স, ওজন এবং স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপর নির্ভর করবে।

ইসলাম ধর্মে কালোজিরার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলা হয়েছে ,কালোজিরা ব্যবহারে একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের মুক্তি রয়েছে। এছাড়াও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ও প্রমাণিত হয়েছে, কালোজিরা একটি সুপার ফুড।যা মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

কালিজিরা খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। তারপরও কিছু কথা থেকে যায়। কোন কিছুই খুব বেশি খাওয়া উচিত নয় খুব বেশি যে ক্ষতির সম্ভাবনা ও থাকে। তাই প্রতিদিন ১ চা চামচ করে কালোজিরা খেলে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।


কালোজিরার উপকারিতাঃ

ঔষধি গুণে সম্পন্ন কালোজিরা রয়েছে দা্রুন সব উপকারিতা। বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় করতে পারে কালোজিরা। কালোজিরাতে রয়েছে ভিটামিন, প্রোটিন, আইরন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ।জেনেনি কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে

কালোজিরা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালোজিরা একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণশক্তি বাড়িয়ে তুলে।

কালোজিরা খেলে আমাদের দেহে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো কাজ করে তাই মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে তাই প্রতিদিন নিয়মিত কালোজিরা খাওয়া উচিত।

মাথা ব্যথা কমায়

মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে হলে ১/২ চা চামচ কালোজিরা তেল মাথায় ভালো হবে মেসেজ করতে হবে এবং এক চা চামচ কালোজিরা তেলের সাথে এক চা চামচ মধু দিনে তিনবার করে দুই থেকে তিন সপ্তাহ খেতে হবে। তাহলে দেখবেন মাথা ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

হার্টের সমস্যা দূর করে

হার্টের সমস্যা দূর করার জন্য কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১ চা চামচ কালোজিরা গুড়া ও ১ কাপ দুধের সাথে মিশিয়ে দৈনিক ২ করে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ খেলেই উপকার পাবেন। এছাড়া কালোজিরা তেল প্রতিদিন যদি বুকে মালিশ করেন হার্টের সমস্যা অনেকটা দূর হয়ে যাবে।

শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দূর করে

যারা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগে তাদের কালোজিরা অনেক বেশি উপকারী। প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। কালোজিরা হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য কালোজিরা অনেক উপকারী। প্রতিদিন ১ চিমটি পরিমাণ কালোজিরা ১ গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে যদি খালি পেটে খেতে পারেন। এতে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

এছাড়াও রং চা বা গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে দৈনিক ২ বার করে কালোজিরা খেলে অনেক উপকার পাবেন। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য কালোজিরা খেতে পারেন।

গ্যাসের সমস্যা দূর করে

গ্যাসের সমস্যা দূর করার জন্য প্রতিদিন এক চা চামচ কালিজিরা তেলের সাথে সমপরিমাণ মধুসহ দিনে তিনবার করে দুই থাকায় তিন সপ্তাহ খেতে পারেন এতে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

জন্ডিস বা লিভারের সমস্যা দূর করে

জন্ডিস বা লিভারের সমস্যা দূর করার জন্য আপনি কালোজিরা খেতে পারেন। লিভার ও জন্ডিসের জন্য বেশি উপকারী ।এক গ্লাস ত্রিপলার শরবতের সাথে ১ চা চামচ কালোজিরা তেল দিনে ৩বার করে৪ থেকে ৫ সপ্তাহ যদি খেতে পারেন। তাহলে জন্ডিস ও লিভারের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

শিশুর দৈহিক ও মানসিক অবস্থা বৃদ্ধি করে

দৈহিক শিশুর দৈহিক ও মানসিক অবস্থা বৃদ্ধি করার জন্য কালোজিরার তেল বেশ উপকারী। কালোজিরা শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

স্বাস্থ্য ভালো রাখে

কালোজিরাকে বলা হয় সকল রোগের মহা ঔষধ। মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল প্রকার রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন কালোজিরা খাওয়া উচিত।

হজমের সমস্যা দূর করে

হজের সমস্যা দূর করতে ১ থেকে ২ চামচ কালোজিরা বেটে পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত খেতে পারেন। এভাবে দিনে ২-৩ বার খেলেই এক মাসের মধ্যে হজম শক্তি বেড়ে যাবে। পাশাপাশি পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন।

চুল পড়া বন্ধ

চুলের পুষ্টি যোগাতে ও চুল পড়া বন্ধ করতে হলে আপনাকে নিয়মিত কালোজিরা খেতে হবে। চুলের জন্য সবচেয়ে ভালো ফলাফল পেতে পারেন যদি চুলের গোড়ায় কালোজিরার তেল মালিশ করতে পারেন।তাহলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপতঙ্গ সতেজ হয়। এতে করে যে কোন জীবানুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তাই প্রতিদিন ১ চা চামচ করে কালোজিরা খাওয়া উচিত। যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।


টানা ৭ দিন কালোজিরা খেলে কি হয়ঃ

কালোজিরার তেল ব্যবহার করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে এই কালোজিরা।

এছাড়া কালোজিরা দেহের শ্বাসকষ্ট ঘুমের অসুবিধা এসব বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা হিসেবে কাজ করে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক টানা ৭ দিন কালোজিরা খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে জানি।

১। গরম পানির সঙ্গে লেবু ও একটু কালোজিরা মিশিয়ে খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

২। মধু , পুদিনা পাতার রস আরেকটু কালোজিরা মিশিয়ে খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

৩। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দেয়ার জন্য প্রতিদিন কালোজিরা খাওয়া উচিত যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবে।

৪।কালোজিরা সাথে মধু মিশিয়ে টানা ৭ দিন খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

৫। শরীরের রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে কালোজিরা খেতে হবে। যা আমাদের রক্তচাপকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখবে।


কালোজিরা খেলে কি গ্যাস হয়ঃ

আপনারা যারা দীর্ঘদিন যাবত গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন তারা কালোজিরা খেতে পারেন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে পাশাপাশি ক্ষুধা ভাব বাড়ায়। এছাড়া কালোজিরা খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করে। জ্বর, মাথা ব্যথা কিংবা দাঁতের ব্যথাতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কালোজিরা বহু পুষ্টিগুনে ভরপুর। কালোজিরার তেলের উপকার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে , হৃদরোগ জনিত সমস্যা দূর করে , ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। এছাড়া মাংসপেশির ব্যথা কমাতেও কালিজিরার তেল উপকারী।

কালোজিরা শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় পেটের যাবতীয় রোগ জীবাণু ও গ্যাস দূর করতে কালোজিরা গুরুত্ব অপরিসীম ।তাই গ্যাস থেকে ভালো থাকতে হলে নিয়মিত কালোজিরা খেতে হবে। কালোজিরা গ্যাস নিরাময়ের মহা ওষুধ হিসেবে কাজ করে।

কালোজিরা খাওয়ার নিয়মঃ

কালোজিরা উপকারিতা পেতে হলে নিয়মিত কালোজিরা খেতে হবে। কালোজিরা খাওয়ার কিছু নিয়ম নিচে দেওয়া হল।

  • প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে ১ গ্লাস পানির সাথে অথবা মধুর সাথে মিশিয়ে ১ চা চামচ কালিজিরা খেতে পারেন। যা শরীরের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
  • চা বা গরম ভাতের সাথেও মিশিয়েও কালোজিরা খেতে পারেন।
  • যেকোন তরকারি রান্নায় কালোজিরা ব্যবহার করতে পারেন । এছাড়া কালোজিরা ভর্তা করেও খেতে পারেন গরম ভাতের সাথে যা অনেক সুস্বাদু।
  • বিভিন্ন খাবারের সাথেও কালোজিরা ব্যবহার করতে পারেন। এতে অনেক পুষ্টিগুণ অনেক বেড়ে যাবে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

মন্তব্যঃ

অবশেষে বলতে চাই, আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার পরে আপনারা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে। কলিজিরা যে আমাদের শরীরের জন্য কত উপকার সে সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন।

তাই আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার পরে যদি একটুও ভালো লেগে থাকে। আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন হয়তো তারাও উপকৃত হবে। ধন্যবাদ।





এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url