ডাবের পানির উপকারিতা ও গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা



প্রিয় পাঠক ডাবের পানি খেতে ছোট বড় সবাই পছন্দ করে। আসুন জেনে নেওয়া যাক, ডাবের পানির উপকারিতা ও ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমারে আর্টিকেলে তুলে ধরেছি।

ডাবের পানির উপকারিতা

আপনারা এ সম্পর্কে জানার জন্য আমার আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি অনেক উপকৃত হবেন। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ভূমিকাঃ

ডাবের পানির উপকারিতা অপরিসীম। যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। গরমের সময় সারাদিন পরিশ্রম করার পরে শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে যায় এবং শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়।

তাই শরীরের পানির চাহিদা পূরণের জন্য আমরা ডাবের পানি খেতে পারি। যা আমাদের পানিশূন্যতা দূর করে এবং শরীরের জন্যও উপকারী হয়। আমরা ডাবের পানি বিভিন্ন সময় খেয়ে থাকি।

 তবে ডাবের পানি খাওয়ারও কিছু নিয়ম আছে ,তারপর গর্ভ অবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা। এছাড়া ডাবের শাসের উপকারিতা আছে নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।


ডাবের পানির উপকারিতাঃ

গ্রীষ্মের গরমে সারা দিনের ব্যস্ততায় পথ চলতে চলতে শরীরে ঘামের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যায়। এতে শরীর অনেক দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে যায়। এরকম পরিস্থিতিতে একমাত্র শরীরের স্বস্তি এনে দিতে পারে ডাবের পানি।

ডাবের পানি শুধু আমাদের শরীরের ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে না। এটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।আসুন জেনে নেওয়া যাক ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ত্বকের যত্নে ডাবের পানি

ত্বকের ইনফেকশন ও অন্যান্য সমস্যা দূর করতে ডাবের পানির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । ডাবের পানিতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল। যা ত্বকের অতিরিক্ত তেলকে দূর করতে সাহায্য করে এবং ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে

ডাবের পানি ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর। ডাবের পানিতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি যা ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করে।

হাড় মজবুত করে

হাড়কে মজবুত করার জন্য ক্যালসিয়াম অনেক প্রয়োজন। ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। যা হাড়ের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়া হাড়কে ভাল রাখতে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম যা ডাবের পানিতে বিদ্যমান।

পানি শূন্যতা দূর করে

অতিরিক্ত গরমের কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘামের সাথে পানি বের হয়ে যায়। যার ফলে শরীরে পানি শূন্য হয়ে পড়ে । এর ফলে ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যা দেখা দেয়। ডাবে আছে কার্বোহাইড্রেট যা শক্তি বাড়ায় এবং শরীরে পানি শূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

গ্যাসের সমস্যা দূর করে

ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা আমাদেরকে সুস্থ রাখে ও হজম শক্তি অনেক বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া নিয়মিত ডাবের পানি খেলে গ্যাসের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন তাদের জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারি।

এছাড়া ডাবের পানিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপকারী উপাদান। যা ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে নষ্ট করে পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

ডাবের পানি খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে এবং ক্ষুধার প্রবণতা কম হয়। ফলে কম খাওয়া হয় এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডাবের পানিতে কোন চর্বি নাই। এটি শরীরে অতিরিক্ত চিনি শোষণ করে ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।তাই ডাবের পানির উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।

মুখে ডাবের পানির উপকারিতাঃ

গরমের সময় ত্বকের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। সাধারণত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। দিনে দুই থেকে তিনবার ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুলে মুখের সতেজতা বজায় থাকে এবং ত্বকের আদ্রতা নষ্ট হয় না।

তবে আপনি যদি ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়া করেন । সাধারণত তারা ঠান্ডা পানির চেয়ে অনেক বেশি উপকারী । এতে আপনার ত্বকের অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে যা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল থাকে। যা ত্বককে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

যদি আপনার মুখে অনেক দাগ থাকে তাহলে ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুলে আপনার জন্য খুবই উপকারী হবে। এর ফলে মুখের দাগ সহজে পরিষ্কার হবে এবং মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। আপনার মুখে যদি প্রচুর পরিমাণে ব্রণ থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুলে ভালো ফলাফল পাবেন।

যাদের তৈলাক্ত ত্বক তারাও ডাবের পানি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। এছাড়া যাদের চোখের নিচে কালো দাগ তারাও ডাবের পানি ব্যবহার করতে পারেন। ভাবের পানিতে একটি তুলোর বলে ডুবিয়ে চোখের নিচে লাগান। প্রতিদিন এটি চোখের নিচে লাগালে কালো দাগ কয়েকদিনের মধ্যেই দূর হয়ে যাবে।


গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতাঃ

গর্ভাবস্থায় শরীরে যেন পানি শূন্যতা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা খুবই জরুরী । এজন্য পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে । পাশাপাশি ডাবের পানি খেতে পারলে তো আরো ভালো। ডাবের পানি গর্ভাবস্থায় বেশ উপকারী। গর্ভাবস্থায় অবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা নিচেআলোচনা করা হলো।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

গর্ভবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি বড় সমস্যা । গর্ভাবস্থায় প্রোজেক্টেরন হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাবার কারণে সাধারণত এই সমস্যা হয়ে থাকে। এ সময় আশসমৃদ্ধ ডাবের পানি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

বুক জ্বালাপোড়া কমায়

গর্ববস্থায় আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে বুক জ্বালাপোড়া করে। ডাবের পানি এই সমস্যা দূর করতে অনেকটা সাহায্য করে। ডাবের পানি পান করলে এসিডের মাত্রা কমে যায়।এতে হজমের সমস্যা ও বুক জ্বালা পড়ার সমস্যাও দূর হয়ে যায়।

পানি শূন্যতা কমায়

গর্ভাবস্থায় পানি শূন্যতা সমস্যা দেখা দেয় । আপনি এই সমস্যা দূর করার জন্য আপনাকে ডাবের পানি খেতে হবে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারণ এতে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এছাড়া ডাবের পানি মূত্রনালী সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম থাকে

ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এই দুটো উপাদানই থাকে। এ দুটো উপাদান গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।

ডাবের শাসের উপকারিতাঃ

ডাবের পানিতে অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে। সুস্বাস্থ্য কিংবা উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ডাবের পানি বেশ উপকারী। প্রচন্ড গরমে তৃষ্ণা মেটাতে, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারী।

বিশেষ করে ডায়রিয়া রোগীদের বেশি করে ডাবের পানি খেতে দেওয়া হয় । যা পানি শূন্যতা দূর করে এবং শরীরে অনেক এনার্জি যোগায় । তাই ডাবের পানি ছাড়াও ডাবের শাসের উপকারিতা অনেক।

আমরা অনেকে ডাবের পানি খেয়ে ডাবের ভিতরে শাসটা ফেলে দেয়। আমরা অনেকেই জানিনা ডাবের শাসের উপকারিতা। যার ফলে আমরা ডাবের শাসটা ফেলে দেয়। আপনি জানলে অবাক হবেন ডাবের শাসে প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর।

প্রতি ১০০ গ্রাম ডাবের শাসে আছে ৩৫৪ ক্যালরি,৩৩ গ্রাম ফ্যাট, ২০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম,৩৫৬ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম ও ৩.৩ গ্রাম প্রোটিন। এছাড়া আছে ভিটামিন সি ,ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি ১২।ডাবের শাস আমাদের জন্য অনেক উপকারী।

ওজন কমাতে সাহায্য করে ডাবের শাঁস

ডাবের শাস দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে ফলে বারবার ক্ষুধা লাগে না । তাই বারবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না ।তাইতো ওজন বৃদ্ধির ভয় ও থাকে না।

হজমে সাহায্য করে

অনেকে মনে করেন ডাবের শাস হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে । ডাবের শাসের ক্ষেত্রে এমন কোন সমস্যা নেই বরং ডাবের শাঁস খেলে তা হজমে সাহায্য করে। এতে থাকা প্রচুর ফাইবার যা হজম ক্ষমতা শক্তিশালী করার পাশাপাশি পেটকে সুস্থ রাখে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্য ডাবের শাস অনেক উপকারী । কারণ ডাবের শাস রক্তের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এটি হাড় শক্ত করে, মানসিক চাপ কমায়, দাঁত ভালো রাখে, এমনকি কিডনি ভালো রাখতে ও কাজ করে।এই ডাবের শাসের উপকারিতা তো জানতে পারলেন এবার নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।

ডাবের পানি খাওয়ার নিয়মঃ

যারা নিয়মিত ডাবের পানি খান তাদের অনেকের মতে । সকালে খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়া সবচেয়ে ভালো অভ্যাস। তাতে শরীর ভালো থাকে, পেটের কোন সমস্যা হয় না হজম ভালো হয়।

পুষ্টিবিদরা, ডাবের পানি সকালে খেলেই বেশি উপকার পাওয়া যায় বলে অভিহিত করেছেন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে খালি পেটে ডাবের পানি খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। ডাবের পানিতে লরিক এসিড পাওয়া যায় যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে । ডাবের পানি সকালে খালি পেটে খেলে এর উপকারিতা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এছাড়া ডাবের পানি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। ডিহাইড্রেশন দূর করে , শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করে, পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর করে। আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে ডাবের পানি।

মন্তব্যঃ

পরিশেষে বলতে চায়, আমার আর্টিকেলটি পড়ার পরে আপনারা ডাবের পানি উপকারিতা ও ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম। এছাড়াও ডাবের শাসের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আপনারা জানতে পেরেছেন। আশা করি অনেক অজানা বিষয় জেনে আপনি উপকৃত হয়েছেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url