রুপর্চ্চায় এলোভেরার ব্যবহার ও চুলের যত্নে এলোভেরা
ঘরোয়া পদ্ধতি্তে রূপচর্চা এবং বয়স অনুযায়ী ত্বকের যত্ন
প্রিয় বন্ধুরা, বর্তমানে এই যান্ত্রিক জীবনে আমরা এতটাই ব্যস্ত থাকি যে নিজের ত্বকের যত্ন নিতে ভুলে যায় ।তারপরেও কেনা চায় নিজের ত্বককে আকর্ষণীয় করে তুলতে। ত্বককে আকর্ষণীয় করার জন্য এলোভেরার গুরুত্ব অপরিসীম।
আমরা অ্যালোভেরা দিয়েই খুব সহজেই আমাদের রূপচর্চায় অ্যালোভেরার ব্যবহার এছাড়া চুলের যত্নে।অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারি। নিচে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার অপরিসীম । যুগ যুগ ধরে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় এলোভেরা ব্যবহার হয়ে আসছে। নিচে রূপচর্চায় এলোভেরার ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ভূমিকা
আমরা আমাদের ত্বককে সুন্দর করার জন্য কত কিছুই না করে থাকি নিজের ত্বকের সৌন্দর্য ও তোকে ভালো রাখার জন্য আমরা এলোভেরা ব্যবহার করতে পারি। এলোভেরা মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম,সোডিয়াম, জিংক, আয়রন, ভিটামিন এ ও পটাশিয়াম ইত্যাদি।
নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য আমরা এই প্রাকৃতিক উদ্ভিদের ওপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারি । তাই নিজের রূপচর্চায় অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারি সেই সাথে চুলের যত্নেও অ্যালোভেরার ভূমিকা অপরিসীম।
রূপচর্চায় এলোভেরার ব্যবহার
বর্তমান সময়ে রূপচর্চা করতে কেনা ভালোবাসে। এই আর এই রূপচর্চার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক্স ব্যবহার করে থাকি। ঘরোয়া উপায়ে আমরা অ্যালোভেরা দিয়েও রূপচর্চা করতে পারি। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও ত্বককে ভালো রাখতে অ্যালোভেরার বিকল্প নেই।
রূপচর্চার জন্য অ্যালোভেরা জেল হিসেবে ব্যবহার করতে পারি আবার ফেসপ্যাক বানিয়ে ও অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারি। আসুন আমরা জেনেনি, রূপচর্চায় অ্যালোভেরার ব্যবহার নিচে আলোচনা করা হলো।
ত্বকের ভাঁজ দূর
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের চামড়ায় ভাজ পড়ে যায় যা আপনি সহজেই সমাধান করতে পারেন এই এলোভেরা ব্যবহার করে। অ্যালোভেরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান দ্বারা সমৃদ্ধ । অ্যালোভেরা জেল ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে এবং ভিটামিন এ, বি, সি ও এ উপাদান ত্বকের পুষ্টি যোগায়। রোদে পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
এটি আমাদের ত্বকে ব্যবহার করতে পারি এভাবে যে, দুই টেবিল চামচ এলোভেরা জেল আর অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে একটি মাস্ক তৈরি করতে হবে। ত্বকে লাগিয়ে রেখে ১৫ মিনিট পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ত্বকের শুষ্কতা দুর
আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে থাকে আর এই শুষ্ক ত্বক ঠিক করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক্স ব্যবহার করে থাকি । আমরা ঘরে বসেই এ কসমেটিক তৈরি করতে পারি । আমরা প্রথমে এলোভেরা পাতাটা কেটে নিব তারপরে তার ভেতর কার জেলটি ছুরি দিয়ে ছাড়িয়ে নেব এবং সেই জেলটি আমরা আমাদের মুখের ত্বকে লাগাবো।
মুখে লাগানোর ৫থেকে ১০ মিনিট পরে আমরা ত্বকটি ধুয়ে ফেলব । তাহলে দেখা যাবে যে, আমাদের মুখের ত্বক মসৃণ, উজ্জল ও নরম হবে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে এবং ত্বক হবে সুন্দর।
খুশকি দূর করতে এলোভেরা জেল এর ব্যবহারের জুরি নেই। অ্যালোভেরা জেল এর সঙ্গে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুল হবে মজবুত ও সুন্দর।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত এলোভেরা জুস পান করতে পারেন । অ্যালোভেরা জুস স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী ।এছাড়া এলোভেরা জেল সরাসরি লাগালে ত্বকে লাগালেও ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর হবে।
ফেসওয়াশ হিসেবে ব্যবহার
ফেসওয়াশ হিসেবেও আমরা তোকে এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারি । এজন্য এক টেবিল চামচ এলোভেরা জেলের সাথে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে ।
কয়েক মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন এই ফেসওয়াসটি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার জন্য খুবই উপকারী এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও সুন্দর করবে।
ত্বক ফাটার সমাধান
শীতে আমাদের ত্বক ফাটার সমস্যা দেখা দেয় । ত্বক ফাটার সমস্যা সমাধানের জন্য এলোভেরা জেল আমাদের ব্যবহার করা উচিত। এজন্য এলোভেরা জেল এর সাথে অলিভ অয়েল এবং মধু মিশিয়ে সে ফাটা তোকে ত্বকে লাগাতে হবে। এতে ত্বকের আদ্রতা ফিরে আসবে এবং ইনফেকশন থাকলেও ইনফেকশন থেকেও রক্ষা পাবে।
অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার
অ্যালোভেরা অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে । আমাদের ত্বক অল্প কেটে গেলে বা ক্ষত হলে সেখানে আমরা এলোভেরা জেল লাগাতে পারে এতে দুই তিনবার লাগালেই আরাম হবে।
ঠোঁটের উজ্জ্বলতাই ব্যবহার
ঠোঁটের রং উজ্জ্বল রাখতে ঠোঁট নরম ও মসৃণ করতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন যদি ঠোঁটে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা হয় এতে ঠোঁট উজ্জ্বল ও নরম হয়।
চুলের যত্নে এলোভেরার ব্যবহার
ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার অপরিসীম , ঠিক তেমনি চুলকে মজবুত সুন্দর ও ঝলমলে করতে এর ভূমিকা অপরিসীম। অ্যালোভেরার প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল ঘন ও সুন্দর হয়।
খুশকি দূর হয়, চুল পড়া বন্ধ হয়, চুল ভেঙ্গে যায় যাওয়া দূর হয়, শুষ্কতা দূর হয়, চুল উজ্জ্বল ও সুন্দর হয় ।তাই চুলের যত্নে এলোভেরার ব্যবহার অপরিসীম।
এলোভেরা ও লেবুর রস ব্যবহার
আমাদের চুলে তেল চিটচিটে ভাব থাকে সেটা দূর করার জন্য এলোভেরা ও লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। এক টেবিল চামচ এলোভেরা জেলের সাথে দুই টেবিল চামচ লেবুর রস ভালো হবে মিক্স করে পেস্ট তৈরি করে নেন। এই পেস্টটি ভেজা চুলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন এতে চুল হবে সুন্দর ও মসৃণ।
এলোভেরা ও অলিভ অয়েলের ব্যবহার
চুলের আগা ফাটা রোধ করতে এবং চুলকে সিল্কি করতে সাহায্য করে এলোভেরা ও অলিভয়েলের পেস্ট। এলোভেরা জেল ও অলিভ অয়েল দিয়ে পেস্ট তৈরি করে সেটি নিয়মিত চুলে লাগাতে হবে ।তাহলেই চুলের আগা ফাটা রোধ হবে এবং চুলের সিল্কি করতে সাহায্য করবে।
এলোভেরা ও ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ব্যবহার
এলোভেরা জেল ও দুইটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ভেতরের তরল পদার্থটি বের করে। এলোভেরা জেল এর সাথে মিক্সড করতে হবে তারপর কয়েক ফোটা আমন্ড অয়েল এতে যোগ করুন এবং ভালো হবে মিশিয়ে নিন ।
তারপর হাত দিয়ে এগুলো চুলে ব্যবহার করুন ৪০-৪৫ মিনিট রাখার পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল ন্যাচারালি হেলদি হবে।
অ্যালোভেরা ও মেথির ব্যবহার
এলোভেরার সাথে মেথি ব্যবহার করলে চুল লম্বা হয় চুলের গোড়া শক্ত হয় মজবুত হয়। অ্যালোভেরা ও মেথির পেস্ট একবার তৈরি করে আপনি অনেকদিন পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যালোভেরার পাতা কেটে সেখান থেকে জেল বের করে নিয়ে ব্রান্ডারে পেস্ট করে নিবেন ।
তারপরে মেথিদানা একটি বাটিতে ভিজিয়ে রাখুন পানিটুকু নিয়ে এলোভেরা জেলের সাথে মিশিয়ে একটি বোতলে রেখে দিন । নিয়মিত গোসলের আগে এই পেস্ট চুলে ব্যবহার করতে পারেন তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এতে চুল লম্বা হবে, চুলের গোড়া শক্ত হবে ও মজবুত হবে।
কন্ডিশনার হিসেবে অ্যালোভেরার ব্যবহার
চুলের ঝলমলে ভাব বাড়াতে কন্ডিশনার হিসেবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেক সময় রোদে ও ধুলা বালিতে চুল রুক্ষ হয়ে যায় ও দুর্বল হয়ে মাঝখান থেকে ভেঙ্গে পড়ে। শ্যাম্পু করার পর নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করলে মুক্তি পাবেন এই সমস্যা থেকে ।
আমরা কন্ডিশনার ঘরে বসে বানাতে পারি এলোভেরা দিয়ে। এজন্য একটি বাটিতে পানি নিয়ে সেখানে লেবুর রস মেশাতে হবে এবং অল্প একটু নারিকেল তেল সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে চুলে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।
এলোভেরা ও ডিম এর ব্যবহার
চুলের যত্নে এলোভেরা জেল এর সাথে ডিম ব্যবহার করতে পারেন। একটি ডিম নিয়ে অ্যালোভেরা জেল এর সাথে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর এটি একটি ব্রাশ দিয়ে চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন তারপর আধা ঘন্টা অপেক্ষা করুন এবং হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুলের শুষ্কতা দূর হবে ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
মন্তব্য
অবশেষে বলতে চাই ,উপরে আলোচনা থেকে আমরা এটাই জানতে পারলাম। আমাদের রূপচর্চায় এলোভেরার ব্যবহার কতটা গুরুত্বপূর্ণ একই অ্যালোভেরা দিয়েই আমরা আমাদের ত্বকের যত্ন, চুলের যত্ন এছাড়া আরো নানা ধরনের সমস্যার সমাধান করতে পারি।
সে সম্পর্কেও উপরের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আমার এই লেখাটি পড়ার পরে যদি কারো ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন। হয়তো অনেকেই উপকৃত হবে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url