কমলালেবু খাওয়ার উপকারিতা ও রূপচর্চায় কমলার ব্যবহার

মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় ও তৈলাক্ত ত্বকে মধুর ব্যবহার

 প্রিয় পাঠক আপনার অনেকেই জানতে চেয়েছেন, কমলালেবু খাওয়ার উপকারিতা ও রূপচর্চায় কমলার ব্যবহার কিভাবে করা যায়। এ সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমে বলতে হয় কমলা সুস্বাদু ও রসালো ফল। কমলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।


কমলা লেবু খাওয়ার উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কমলা অনেক উপকারী । এছাড়া তো কমলায় রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণেভরপুর ফল । আসুন এ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,  আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন এ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং উপকৃত হবেন । তাহলে পড়তে থাকি।

ভূমিকা

কমলার স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু ফল। কমলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কমলার ভূমিকা অপরিসিম। কমলা আমাদের হার্ট সুস্থ রাখে, ত্বক ভালো রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।


এছাড়াও বিভিন্ন পুষ্টিগুনে ভরপুর এই কমলা লেবু। আমরা অনেকেই কমলালেবু খায়। কিন্তু কমলালেবু খাওয়ার উপকারিতা ও রূপচর্চায় কমলার ব্যবহার কিভাবে হয়ে থাকে তা আমরা অনেকেই জানিনা। এ সম্পর্কে জানতে নিচে পড়তে থাকুন।

কমলা লেবু খাওয়ার উপকারিতা


কমলা লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কমলা লেবু একটি সুস্বাদু ফল এ ফলটি সবাই খেতে খুবই ভালোবাসে। কমলা লেবু যদিও বিদেশি ফল তাই সারা বছরই আমাদের দেশে পাওয়া যায়।

 এছাড়া কমলা লেবুতে ভিটামিন এ, বি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম উপাদানে ভরপুর। এই ফলে রয়েছে অনেক এন্টিঅক্সিডেন্ট যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। চলুন জেনে নিই কমলা লেবু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত দেওয়া হল।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

কমলা লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শক্তিশালী করে। ছোট বড় যেকোনো ধরনের রোগ ধারে কাছে ঘেষতে পারে না।

সেই সঙ্গে যে কোন ধরনের সংক্রমনের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কমলা লেবুর ভূমিকা অপরসিম।

ঘুমের সমস্যা দূর করে

আমাদের নানা কারণে রাতে ঠিকমত ঘুমায হয় না। তাই প্রতিদিন এর খাবারের তালিকায় যদি আমরা কমলা লেবু খায়। তাহলে এটি আমাদের শরীরে থাকা ফ্লেবোনয়েড, বেশ কিছু নিউরোট্রান্সমিটারকে একটিভ করে দেয়। এতে একদিকে যেমন ঘুমের সমস্যা দূর করে তেমনি স্মৃতি শক্তির কার্যক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা পালন করে।

ওজন কমায়

আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত করে একটি করে কমলালেবু খেতে পারেন তাহলে আপনার ওজন বাড়ার চিন্তা থেকে মুক্তি থাকবেন। প্রতিদিন একটি করে কমলে লেবু খেলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রিত হবে তাই কমলালেবু খাওয়া উচিত।

আলসারের মতো রোগ দূর করে

আমরা যদি নিয়মিত কমলা লেবু খায়। তাহলে আমাদের পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে এছাড়া আলসারের মত সমস্যাও দূর হয়ে যাবে। তাই নিয়মিত কমলা লেবু খেলে শুধু আলসার নয় আরো অন্যান্য ধরনের সমস্যাও দূর হয়ে যাবে। তাই প্রতিদিন কমলালেবু খাওয়া উচিত।

হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

কমলা লেবুতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। যা আমাদের হার্টের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং হাটের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অন্যান্য উপকারী উপাদান দেহের ভেতরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।যার ফলে হার্টে কোন ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে

কমলালেবু তো প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এর ফলে আমাদের ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে ।তেমনি আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয়ে যায় এবং অনেক উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় করে তোলে । তাই ত্বকের যত্নে কমলা লেবুর রসের কোন বিকল্প নেই।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

নিয়মিত কমলা লেবু খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। কমলা লেবু আমাদের উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে, হার্ট ভালো রাখে এবং ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই প্রতিদিন নিয়মিত কমলা লেবু খাওয়া উচিত।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে

কমলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা আমাদের প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কমলালেবু খেলে আমাদের ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কমবেশি প্রতিদিনই কমলা লেবু খাওয়া উচিত এছাড়া প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে কমলা লেবুতে।

কমলার পুষ্টিগুণ

কমলা লেবু একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কমলা লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এ ফলটি খেতে সবাই ভালোবাসে। তাই কমলার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, একটি মাঝারি আকারের কমলায় ৬২ ক্যালরি থাকে। এছাড়া ভিটামিন সি থাকে ৯৩ শতাংশ, ফলেট থাকে ১০ শতাংশ, ভিটামিন বি ১৯ শতাংশ, কপার- পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম থাকে যথাক্রমে ৭, ৫ ও ৬ শতাংশ এছাড়া ফাইবার থাকে ১১ শতাংশ।

সব মিলিয়ে কমলা একটি দারুণ স্বাস্থ্যকর ফল। কমালা লেবুতে প্রায় ৮৭ শতাংশই পানি থাকে। শিতকালে যখন আমরা পানি কম খাই তখন এই ফলটি খেলে আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি পূরন করবে এবং ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কমলা লেবু আরো কিছু পুষ্টিগুণে ভরপুর। যেমন,

  • দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে
  • রাত কোন রাতকানা রোগ নিরময়ে বেশি উপকারী
  • ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে
  • কমলা দাঁতের ক্যাভিটি রোধ করতে সাহায্য করে
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
  • হার্ট সুস্থ রাখে
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
  • হজম শক্তি বাড়ায়
  • এছাড়া নানা ধরনের চর্মরোগ দূর করে।

এক কথায় বলা যায়, কমলালেবু পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি জাদুকরী ফল।

কমলা খাওয়ার নিয়ম

কমলা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। যা আমাদের শরীরের অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর করে। আমরা তো কমলালেবু সবাই খাই আসলে কমলালেবু কোন সময় খেলে, কোন নিয়মে খেলে ভালো সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা, কমলা লেবু খাবার নিয়ম সম্পর্কে একটু জেনেনি।

কমলালেবু ভিটামিন সি ভরপুর একটি রসালো ফল। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী । ভিটামিন সি তে ভরপুর কমলা লেবু সকালে ও রাতে খাওয়া একেবারেই ঠিক না। কমলালেবু খাবার এক ঘণ্টা আগে বা পরে খেতে পারেন ।

 কমলা লেবুতে ভিটামিন সি ,প্রোটিন, মিনারেল ভরপুর । তাই এই ফলটি খাবার আগে খেলে খিদে বাড়ায় এবং পরে খেলে হজমে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তাই কমলালেবু খাবার খাবার এক ঘণ্টা আগে বা পরে খেতে পারেন যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।

রূপচর্চায় কমলার ব্যবহার

কমলা ভিটামিন সি ভরপুর একটি রসালো ফল। এ ফলটি খেতে সবাই ভালোবাসে । এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমরা কমলা রাখতে পারি। এটা আমাদের যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তেমনই আমাদের রূপচর্চায় কমলা ব্যবহার করতে পারি।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি

নিজের ত্বককে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য প্রথমে আমাদেরকে যে কাজটি করতে হবে। সেটি হল কমলার খোসা শুকিয়ে গুড়া করে নিতে হবে। এই কমলার খোসার গুড়ার সঙ্গে পরিমাণ মতো দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। 

তারপরে অল্প দুধের সর মিশিয়ে হাত পায়ের ত্বকে ঘষুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন দেখবেন ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর হবে।

ফেসপ্যাক হিসেবে

কমলার খোসার গুড়া ও টক দই মিশিয়ে নিন একসঙ্গে। তারপরে অল্প কমলার রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন দেখুন উজ্জ্বল হবে।

খুশকি দূর করে

কমলার খোসা ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর সারারাত রেখে পরের দিন থেকে এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। চুল হবে নরম ও খুশকি মুক্ত। খুশকি দূর করতে কমলার খোসার জুড়ি নেই।

কন্ডিশনার হিসেবে

একটি কমলার রসের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ মধু ও পানি মিশিয়ে নিন। তারপর চুলে শ্যাম্পু শেষে এটি ব্যবহার করুন কন্ডিশনার হিসেবে। তারপর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এখন চুল অনেক সুন্দর ,মসৃণ ও সিল্কি হয়ে যাবে।

ত্বকের ময়লা দূর করবে

ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে ময়দার সঙ্গে পরিমাণ মত কমলার রস মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। তারপর কিছুক্ষণ ত্বকের ঘষে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । দেখবেন ত্বকের ভিতরে ময়লা গুলো দূর হয়ে যাবে এবং উজ্জ্বল হবে।

কমলার খোসা গুড়া করার উপায়

কমলাতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ । এছাড়া কমলাতে রাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট । যা আমাদের ত্বকের ও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। আমরা কমলা খায়। কমলার খোসা দিয়ে রূপচর্চাও করে থাকি কিন্তু কমলার খোসা কিভাবে গুড়া করতে হবে সেটা হয়তো অনেকেই জানিনা।

 আসুন জেনে নেই, কমলার খোসা কিভাবে গুড়া করব। প্রথমে চারটি কমলার খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে এবং সেই কমলার খোসা গুলো ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে। খোশাগুলোকে ব্লেন্ড করতে হবে। তাহলে এগুলো তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে।

 এবার খোসাগুলোকে একটি প্লেটে নিয়ে ভালো হবে শুকিয়ে নিতে হবে। খুব কড়া করে রোদে শুকাতে হবে তিন থেকে চার দিন রাখলেই রোদে শুকিয়ে যাবে। যখন দেখবেন যে খোসা হাত দিয়ে চাপ দিলেই ভেঙে যাচ্ছে তখন সেগুলোকে ব্লেন্ডারে মাধ্যমে গুঁড়ো করে নিবেন।
 
কমলার খোসা গুড়া করার পরে এগুলো ভালো ভাবে চেলে নিতে হবে । এই গুড়াগুলো বোতলে রাখতে হবে। আমরা ছয় থেকে সাত মাস সংগ্রহ করে রাখতে পারবো ।এভাবে খুব সহজে আপনারা কমলার খোসা গুড়া করতে পারবেন।

 পরিশেষে

প্রিয় পাঠক, পরিশেষে বলতে চাই , আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার পরে বুঝতে পেরেছেন, যে এখানে কমলালেবু খাওয়ার উপকারিতা ও রূপচর্চায় কমলার ব্যবহার । কমলা কতটা উপকারী এর বিভিন্ন বিষয় আপনারা জানতে পেরেছেন।

 এজন্য অবশ্যই আপনারা উপকৃত হয়েছেন। তাই আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার পরে যদি ন্যূনতম ভালো লেগে থাকে। তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। হয়তো তারাও উপকৃত হবে। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url