প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
প্রিয় বন্ধুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সাগর-পাহাড়ের অপূর্ব মিতালী। সামাজিক সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য নানা ধর্মের বর্ণের মানুষের বসবাস এই সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।
ভূমিকাঃ
সৌন্দর্য কার না ভালো লাগে সুন্দর দেখলে সবারই ভালো লাগে মন জুড়িয়ে যায়। আমাদের দেশের সবচেয়ে সুন্দর পর্যটন নগর হচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। যা দেখলে শুধু দেখতে ইচ্ছে করে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লীলাভূমি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এ সমুদ্রের আশেপাশে অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরপুর। অনেক পাহাড়-পর্বত, হোটেল, বিভিন্ন ধরনের মার্কেট, চারিদিকে শুধু সমুদ্রের গর্জন আর গর্জন।
কক্সবাজার
বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর দীর্ঘ এবং সুন্দর বালুকাময় সমুদ্র সৈকতের জন্য পরিচিত এই কক্সবাজার। কক্সবাজার বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিত।
প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থী বিশ্বের সব থেকে বড় এ সমুদ্র সৈকত ভ্রমন করতে আসেন। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি বঙ্গোপসাগর থেকে ১২০ কিলোমিটার বেশি বিস্তৃত বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত।
কক্সবাজারের নরম সোনালী বালি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা হয়ে গড়ে উঠেছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশাল যেদিকে তাকাই শুধু পানি আর পানি। বড় বড় ঢেউ, তাছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাহাড় যা দেখার মত।
এখানে অনেক উপজাতিরা বাস করে। এখানে বিভিন্ন ধরনের শুটকি মাছ পাওয়া যায়। যা আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের বাইরেও সুটকি মাছগুলো চলে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লীলাভূমি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।
যার গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না। যতই দেখি খালি মনে হয় দেখেই যায়, দেখেই যায়। তবে আমি বলব যাদের মন ভালো নেই, যাদের ভালো লাগে না, তারা অবশ্যই সমুদ্র সৈকত এই কক্সবাজারে চলে আসেন। দেখবেন আপনার মন ভালো হয়ে যাবে। অনেক দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যাবে।
আরো পড়ুনঃ মন ভালো করার উপায়
কক্সবাজারে যাবো কিভাবেঃ
আপনি বাংলাদেশে যে কোন প্রান্ত থেকে কক্সবাজার যেতে পারেন। ঢাকা থেকে বিমানে, সড়ক বা ট্রেনে কক্সবাজার যাওয়া যায়। এছাড়া আপনি দেশীয় এয়ারলাইন্স যেমন বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার এবং ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে কক্সবাজার নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে।
এছাড়া বিকল্প ভাবে আপনি ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে পারেন। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে আপনার সময় লাগে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা যেকোন বাসে যেতে পারেন। যেমন গ্রীন লাইন, শ্যামলী পরিবহন এবং হানিফ এন্টারপ্রাইজ কয়েকটি কোম্পানির গাড়িতে আপনি কক্সবাজার যেতে পারেন।
সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন অংশের নামঃ
লাবনী পয়েন্ট
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন অংশের নাম দিয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লাবনী পয়েন্ট। লাবনী পয়েন্ট কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই পয়েন্ট কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে জনপ্রিয় অংশ।
সোনাদিয়া দ্বীপ
সোনাদিয়া দ্বীপ আছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই সোনাদিয়া দ্বীপ। এই দ্বীপটি সমুদ্র সৈকতের অন্যতম আকর্ষণ।
হিমছড়ি
হিমছড়ি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই এলাকাটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে জন্য বিখ্যাত । হিমছড়ি পাহাড় যেখানে সুন্দর একটি ঝর্ণা আছে এবং বিশাল একটি পাহাড়।সেই পাহাড় উপরে উঠে আপনি গোটা সমুদ্র টা দেখতে পারবেন।
বার্মিজ মার্কেট
কক্সবাজার শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বার্মিজ মার্কেট। এই মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক খাবার উপহার সামগ্রী ও কেনাকাটার জন্য বিখ্যাত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পরিদর্শনের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো শীতকাল। এ সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যঃ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত অসাধারণ সুন্দর যা বলে প্রকাশ করা যাবে না। এটা একটি দীর্ঘ বালুকাময় সৈকত। যা সাদা বালি এবং স্বচ্ছ নীল জল দিয়ে পানি দিয়ে আবৃত সৈকতটি সারা বছরই পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত হলো সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান ও দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত হিসেবে পরিচিত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পানি স্বচ্ছ এবং নীল। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সূর্যাস্ত অপরূপ সুন্দর।
সূর্য যখন পশ্চিমে ডুবে যায় তখন আকাশের দিকে একটি রঙিন আলো প্রদর্শনী তৈরি হয় এটা দেখতে যে কতই ভালো লাগে কি আর বলবো। যদি সমুদ্র সৈকতে যান অবশ্যই সূর্যাস্ত দেখবেন তাহলে বুঝবেন কতই না ভালো লাগছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে অনেক সাংস্কৃতিক আকর্ষণ রয়েছে ।
যার মধ্যে রয়েছে মন্দির ,মসজিদ এবং মৎস্যজীবীদের গ্রাম। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সাংস্কৃতিক আকর্ষণ এবং কক্সবাজার হচ্ছে ভ্রমণের স্থান। আপনি ভ্রমণ করে যেদিকেই যাবেন খালি সুন্দর আর সুন্দর সৌন্দর্যের শেষ নেয়।তাই আপনি দুর্দান্ত সময় কাটাতে পারবেন এই সৌন্দর্য দেখতে দেখতে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হোটেলঃ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হোটেল ভাড়া। হোটেলের অবস্থার উপর নির্ভর করে। কোন হোটেলে কেমন সুযোগ সুবিধা আছে তার ওপর নির্ভর করে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হোটেল ভাড়া এখানে আপনি বেশি বাজেটের হোটেলে থাকতে পারবেন।
কম বাজেটের হোটেলে থাকতে পারবেন। বিভিন্ন সুবিধার হোটেলে আপনি থাকতে পারবেন। যার বাজেট কম সে কম বাজেটে হোটেলে থাকবে। যার বাজেট বেশি সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি নিতে চাই অনেক আরাম করতে চায় সে অবশ্যই ভালো হোটেলে থাকবে।
কক্সবাজারে হোটেল গুলো মূলত এই সাগরে আশেপাশেই হয়ে থাকে। তবে আপনি যদি সাগরকে সঠিকভাবে উপভোগ করতে চান।সাগরে পাশে যে হোটেল গুলো আছে সেগুলোতে থাকলেই আপনি সাগরকে অনেক সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থানঃ
কক্সবাজার বাংলাদেশের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র ।এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাসের জন্য পরিচিত। কক্সবাজারে দেখার মত অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
এটা বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। এটা একটি সুন্দর সৈকত যেখানে আপনি সমুদ্রে নেমে সাঁতার কাটতে পারবেন। সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন এবং গভীর রাত্রে সাগরে পাশে দাঁড়িয়ে সাগরের ঢেউয়ের গর্জন শুনতে পারবেন যা আসলেই অতি সুন্দর।
হিমছড়ি
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এবং জলপ্রপাতের জন্য বিখ্যাত এই হিমছড়ি । এছাড়া হিমছড়ির ছোট ছোট অনেক মার্কেট আছে।
যেখান থেকে আপনি অনেক কিছু কেনাকাটা করতে পারবেন।আর হিমছড়িতে ঝর্ণা আছে সেখানে যদি আপনি সেই ঝর্ণায় গোসল করেন। দেখবেন কতই না মজা পাচ্ছেন আসলে আনন্দটাই আলাদা। যাবেন তো বুঝতে পারবেন হেব্বি মজা।
সোনা দিয়া দ্বীপ
এটা একটি ছোট দ্বীপ যা তার মনোরম সৈকত এবং প্রবাল প্রাচীর এর জন্য বিখ্যাত।
কুতুবদিয়া বাতিঘর
কুতুবদিয়া বাতিঘর যা ১৮৫৬ সালে নির্মিত হয়েছিল। এই কুতুবদিয়া বাতিঘর আমাদের ঐতিহ্য।
বার্মিজ মার্কেট
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সাথেই বার্মিজ মার্কেট রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র কেনাকাটা করা যায়। এখানে অনেক ধরনের সামুদ্রিক খাবার আছে।এখানে সামুদ্রিক শুটকি মাছ পাওয়া যায়। এছাড়া সাগরের অনেক সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় জিনিসপত্র রয়েছে যা দেখলেই নিতে ইচ্ছে হয়।
মহেশখালী দ্বীপ
কক্সবাজারে মহেশখালী দ্বীপ নামে একটি বড় দ্বীপ রয়েছে। যা তার জীবন্ত সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া কক্সবাজার আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা আপনি আপনার সময় অনুযায়ী দেখতে পারবেন। ঘুরতে পারবেন উপভোগ করে আসতে পারবেন।
রামু
রামু একটি ছোট শহর যা কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি তার বৌদ্ধ ঐতিহ্যের জন্য পরিচিতি। রামু মন্দির অন্বেষণ করতে পারেন যেখানে অনেকগুলি প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে।
কক্সবাজার ভ্রমণে কিছু সতর্কবার্তাঃ
কক্সবাজার ভ্রমণের সময় মনে রাখতে হবে স্থানীয় রীতিনীতিকে সম্মান করতে হবে। কক্সবাজার একটি রক্ষণশীল এলাকা এবং দর্শকরা সালিন পোশাক পড়বেন । স্থানীয় রীতি নীতি ও এদের সম্মান করবেন। সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় সতর্ক থাকতে হবে ।
বঙ্গোপসাগরে প্রবল ঢেউ এর জন্য খুব সাবধানে সাগরে নামতে হবে এবং সতর্কতার সাথে সাগরে গোসল করতে হবে । কক্সবাজার হতে পারে তাই রোদ এবং মশা থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সানস্ক্রিন বা পোকামাকড় প্রতিরোধক বাহন ব্যবহার করতে পারেন।
কক্সবাজার পর্যটকদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাদের সাথে মোকাবেলা করার সময় সতর্ক থাকুন এবং সর্বদা আগে থেকে দাম নিয়ে আলোচনা করুন। কক্সবাজার একটি সুন্দর প্রাকৃতিক এলাকা এবং সমুদ্র সৈকত এজন্য সমুদ্রের পানিতে কোন ময়লা ফেলবেন না।
কক্সবাজারে রাজনৈতিক অস্থিরতার ইতিহাস রয়েছে। তাই রাজনৈতিক সমাবেশ ও বিক্ষোভ এড়িয়ে চলবেন।আপনি একটু সতর্ক হয়ে থাকলে খুব সুন্দর এবং আনন্দ ময় ভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন।
মন্তব্যঃ
পরিশেষে বলতে চাই, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লীলাভূমি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ।যার গুণাবলী বলে শেষ করা যাবে না। আপনারা ইতিমধ্যেই আর্টিকেলটি পড়ে জানতে পেরেছেন। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত একটি পর্যটন নগরী এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার পরে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে দিবেন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url