বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক ও সুদবিহীন লোন

প্রিয় বন্ধুরা আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক। এ সম্পর্কে আমি আপনাদেরকে আমার এই আর্টিকেলে সঠিক তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি । যদি আপনারা আমার এই আর্টিকেলটি পড়েন তাহলে জানতে পারবেন।

বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক

বিনা জামাতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক এ সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে দেওয়া হয়েছে । পড়তে থাকুন, জানতে পারবেন, আশা করি উপকৃত হবেন।

ভূমিকাঃ

অর্থের যখন প্রয়োজন হয় তখনই আমরা ঋণ নিয়ে থাকি। এই ঋণ আমরা ব্যাংক থেকে অথবা কোন এনজিও থেকে গ্রহণ করে থাকি। বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিতে গেলে জামানত দিতে হয়। যা সবার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না।

আসুন আমরা জেনে নেই বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক। বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্যাংক আছে যারা আমাদেরকে বিনা জামাতে ঋণ প্রদান করে থাকে। এজন্য বেশ কিছু শর্ত মেনে চলতে হয়। আসুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।


বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংকঃ

আমাদের দেশে বর্তমানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি । কারণ আমাদের দেশে যে তুলনায় শিক্ষিত হচ্ছে সে তুলনায় কর্মসংস্থান খুবই কম। যার ফলে বেকারের সমস্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে ।এমত অবস্থায় শিক্ষিত বেকাররা ব্যবসা-বাণিজ্য করে তারা স্বাবলম্বী হতে চায়।

কিন্তু সবচেয়ে বড় বাঁধা হলো মূলধন। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গেলে যে মূলধন দরকার সেটা তাদের কাছে থাকে না। সে ক্ষেত্রে ঋণের প্রয়োজন হয় আর এই ঋণ নেয়ার জন্য ঋণের বিপরীতে জামানত প্রদান করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।

তাই উদ্যোক্তা হয়ে বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক এটি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ব্যাংক আছে। যারা ব্যবসায়ী কর্মকান্ডে ও অন্যান্য প্রয়োজনে বিনা জামানতের ঋণ প্রদান করে থাকে। কোন ব্যাংক বিনা জামাতে ঋণ প্রদান করে থাকে তার নিচে আলোচনা করা হলো।

বিনা জামানতে ঋণ বলতে কী বোঝায়

ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার জন্য দিনের বিপরীতে নিশ্চয়তার প্রমাণপত্র হিসেবে কোন সম্পদ বা তার মালিকানার কাগজপত্র জমা দিতে হয়।

যেমন জমির দলিল তারপরে ব্যাংক একাউন্টে স্বাক্ষরিত খালি চেক অথবা ব্যবসার কাগজপত্র ইত্যাদি। এগুলোকে জামানত বলা হয়। জামানত ছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা পেলে তাকে বিনা জামাতে লোন বলা হয়।একসময় বিনা জামানতে ঋণ দিত কর্মসংস্থান ব্যাংক।

তবে ১৯৯৮ সালে দেশের বেকার বিশেষ করে শিক্ষিত বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান তৈরি প্রদানের লক্ষ্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক চালু করা হয়। এছাড়া বর্তমানে সোনালী ব্যাংক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক এ ঋণ সুবিধা প্রদান করে আসছে।

বিশেষ করে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে । উদ্যোক্তাদের বিনা জামাতে বিভিন্ন শর্তাবলী পূরণের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করে থাকে। বিদেশ গমনের উদ্দেশ্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক ঋণ প্রদান করে। এছাড়া ঋণের চাহিদা নির্ধারিত পরিমাণের বেশি হলে জামানত দিতে হয়।

কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ঋণঃ

কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে জামানত ছাড়া আপনি ৫ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফ্রি নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে ব্যাংক আপনাকে বিভিন্ন কর্মসূচি অনুযায়ী ঋণের সুদের হার ৮% থেকে ১০% হতে পারে। সাধারণত ঋণ পরিশোধ করতে দেরি হলে ১০% সুদ দিতে হয়।

তবে এ ঋণ সুবিধা পাওয়ার জন্য জামানত বাধ্যতামূলক না হলেও বেশ কিছু শর্তাবলী পূরণ করতে হবে।

বিনা জামানতের ঋণ নেয়ার শর্ত সমূহ
  • আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
  • আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছর । তবে পূর্বে এ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকলে বয়স সীমা শিথিল যোগ্য।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন পঞ্চম শ্রেণি পাস হতে হবে।
  • যে শাখা থেকে আবেদন করবেন সে শাখায় এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে । অথবা সে এলাকার কোন স্থায়ী বাসিন্দাকে আপনার ঋণের গ্যারান্টার হিসেবে দিতে হবে।
  • যে প্রকল্পের জন্য ঋণ নিচ্ছেন সে প্রকল্প পরিচালনার বিষয় উপযুক্ত প্রশিক্ষণ অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর,সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন বা অন্য কোন সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকতে হবে।
  • অন্য কোন ব্যাংক এনজিও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাফি হওয়া যাবে না।
  • ঋণ নীতিমালার অন্য সকল নিয়ম অনুসরণের সক্ষমতা থাকতে হবে।
  • আবেদনকারী ইকুইটি বহনের ক্ষমতা থাকতে হবে।
কিভাবে আবেদন করব

বিনা জামানতের ঋণ দেয় কোন ব্যাংক তা আমরা আগেই জেনেছি। ঋণ পাওয়ার জন্য সরাসরি কর্মস্থান ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় উপস্থিত হয়ে। আপনার ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে।

এক্ষেত্রে ব্যাংকে কি কি ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে এবং ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে সরাসরি কর্মসংস্থান ব্যাংকের হেল্পলাইন নাম্বারে কল করে। ইমেইল করে। ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন।

  • আবেদন করতে লাগবে আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র।
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হবে।
  • যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেবে সে ব্যাংকে তার একটি অ্যাকাউন্ট থাকা লাগবে।
  • ঋণ পরিষদের সক্ষমতা থাকতে হবে।
  • কোন ব্যাংক বা এনজিওর ঋণ খেলাপি অভিযোগ থাকা যাবে না।
  • এছাড়া যোগাযোগ করতে পারেন হেল্পলাইন নাম্বারে।
  • যেমন হেল্প লাইন নাম্বার ০২-৪৭১১ ১১ ৪১।

ব্যাংক লোনের মাসিক কিস্তি হিসাবঃ

আমরা অনেকেই ব্যাংক থেকে বিভিন্ন মেয়াদে লোন নিয়ে থাকি। ব্যাংক আমাদেরকে জানিয়ে দেয় যে আপনি লোন নিয়েছেন এর বিনিময়ে আপনাকে প্রতি মাসে এত টাকা করে কিস্তি দিতে হবে। আমরা সেই অনুপাতের সময় মত কিস্তি পরিশোধ করে থাকি।

কিন্তু আপনি যদি নিজে ব্যাংক লোনের কিস্তি হিসাব করে দেখতে চান। তাহলে আপনার জন্য ব্যাংক লোন পরিশোধ করা সহজ হয়ে যাবে।

ধরুন আপনি ব্যাংক থেকে ১০ লক্ষ টাকা লোন নিলেন। লোনের সুদের হার ৯% এবং লোনটি ৫ বছর মেয়াদী। তাহলে আপনাকে প্রতি মাসে কত টাকা দেয়া লাগবে আসুন জেনে নি ।

৯% সুদের হার ১০ লক্ষ টাকায় প্রতি মাসে আসে ২০ হাজার ৭৫৮ টাকা করে কিস্তি দিতে হবে। আর এভাবে সম্পূর্ণ লোনটি পরিশোধ করতে আপনাকে দিতে হবে ১২ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫০১ টাকা।

 অর্থাৎ পাঁচ বছরের জন্য ১০ লক্ষ টাকার লোন নিলে আপনাকে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা সুদ দিতে হবে।

সুদবিহীন লোনঃ

আমাদের মধ্যে এরকম অনেকে রয়েছেন যারা ব্যাংক লোন নিতে চান। কিন্তু সুদ হারাম জেনে সেটা থেকে বিরত থাকতে চান। তবে তাদের মধ্যে এরকম একটা প্রশ্ন চলে আসে।

সেটা হল সুদবিহীন লোন কি নেয়া সম্ভব? অথবা এমনকি কোন ব্যাংক আছে? যে শুধু বিহীন লোন দিতে পারবে এ ধরনের প্রশ্ন অনেকের মনে আছে। তবে আমি মনে করি সুদ বিহীন কোন ব্যাংক নেই।

আপনি যদি সুদবিহীন লোন নিতে চান তাহলে ব্যক্তি পর্যায়ের কাছ থেকে আপনাকে লোন নিতে হবে । এবং তা খোলাখুলি ভাবে আলাপ করে আপনি সুদবিহীন লোন নিতে পারেন। অর্থাৎ আপনি কারো কাছ থেকে টাকা ধার নিতে পারেন এবং তারপরে নির্দিষ্ট দিন পরে সেটি আপনি দিতে পারেন।

যেমন কারো কাছ থেকে আপনি ১০ হাজার টাকা নিলেন এবং নির্দিষ্ট কিছুদিন পরে তাকে আপনি আবার ১০ হাজার টাকা ফেরত দিলেন। তবে এক্ষেত্রে আপনি একটি কাজ করতে পারেন । হয়তো খুশি হয়ে থাকে কিছু টাকা আপনি দিতে পারেন এক্ষেত্রে এটা সুদ হিসেবে গণ্য হবে না।


সোনালী ব্যাংক পার্সোনাল লোন পাওয়ার উপায়ঃ

আমাদের যখন অর্থের প্রয়োজন হয় আমরা সেই সময় সোনালী ব্যাংকে পার্সোনাল লোন সহায়তা নিতে পারি। পার্সোনাল লোন সোনালী ব্যাংক ব্যক্তিদের আর্থিক চুক্তি ও প্রয়োজনীয় মৌখিক সাহায্য ভিত্তিতে প্রদান করে। তবে এই সুবিধাটি পেতে কিছু নিয়ম ও শর্ত অনুসরণ করতে হবে।

সোনালী ব্যাংকের পার্সোনাল লোন পেতে হলে আপনাকে আবেদন ফরম পূরণ করার সময় সঠিক ও সম্পন্ন তথ্য প্রদান করতে হবে। আপনার পেশা পারিশ্রমিক অবস্থা কর্মস্থল সঞ্চয় ঋণের প্রাক্তন ইতিহাস ইত্যাদি তথ্য দেওয়া প্রয়োজন।

সোনালী ব্যাংকে পার্সোনাল লোন অনুমোদনের জন্য ক্রেডিট চেক প্রয়োজন হতে পারে। তাই আপনার ক্রেডিট রিপোর্ট সঠিক এবং পর্যাপ্ত হতে হবে। লোন অনুমোদিত হলে আপনাকে কিছু দলিল দিতে হবে। আপনার আইডি প্রুফ, আয় প্রুফ, ঠিকানা প্রুফ , গ্যারান্টারের তথ্য ইত্যাদি দরকার হতে পারে।

শর্তাবলী নিয়ে বিস্তারিত জানতে ব্যাংক পরিদর্শন করাই উত্তম। সোনালী ব্যাংক পার্সোনাল লোন প্রধানের সময় একটি ভাল ক্রেডিট ইতিহাস এবং সঠিক প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সাহায্য করতে পারে। যাতে আপনি আপনার আর্থিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন। পার্সোনাল লোন নেয়ার জন্য কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে।

  • আপনার বয়স সর্বনিম্ন ২১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণ এবং নিজস্ব আইডি প্রমাণ প্রদান করতে হবে।
  • মোট আয় ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রদান করতে হবে। যাতে আপনি আপনার কর্মস্থলে এবং আর্থিক অবস্থা প্রমাণ করতে পারেন।
  • ঋণ পরিষদের জন্য একটি বিশেষ হিসাব আপনার ব্যাংকে খোলা রাখতে হবে।

এই শর্তগুলো মেনে চললে আপনি সোনালী ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।

মন্তব্যঃ

প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন যে, বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক। এছাড়া পার্সোনাল লোন সম্পর্কে। তারপরে সুদবিহীন লোন সম্পর্কে। ব্যাংক লোনের মাসিক কিস্তি ইত্যাদি সম্পর্কে আপনারা ধারণা পেয়েছেন। আশা করি আমার আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।
ধন্যবাদ।








এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url