কিভাবে কাঁচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা করা যায় ও হলুদের ফেসপ্যাক
প্রিয় পাঠক আপনার অনেকে জানতে চেয়েছেন, কিভাবে কাঁচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা করা যায় ও হলুদের ফেসপ্যাক কিভাবে বানানো যায়। এ সম্পর্কে সার্চ করে অনেক তথ্যই পেয়েছেন।
আমি আপনাদেরকে সঠিক তথ্য দেয়ার চেষ্টা করব। নিচের সম্পর্কে অজানা অনেক কিছু আলোচনা করা হলো। পড়তে থাকুন নতুন কিছু পেতে পারেন।
ভূমিকা
হলুদ খুবই পরিচিত একটি উপাদান। যা প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের রান্নাবান্না ও ত্বকের যত্ন এছাড়া শরীরের বিভিন্ন উপকারে হলুদ ব্যবহার হয়ে আসছে । হলুদ অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি উপাদান। কিভাবে কাঁচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা করা যায় ও হলুদের ফেসপ্যাক তৈরি করা হয়।
এছাড়াও কাঁচা হলুদ ত্বকে দেওয়ার নিয়ম ছাড়াও আরো অজানা তথ্য নিচে আলোচনা করা হলো। আশা করি পড়লে উপকৃত হবেন।
কিভাবে কাঁচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা করা যায়
রূপচর্চা করতে কেনা পছন্দ করে। তবে বর্তমানে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও রূপচর্চায় বেশ পারদর্শী। রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার অপরসীম । প্রাচীনকাল থেকেই হলুদ ত্বকের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে।
নিজের ত্বককে আরো আকর্ষণীয় করার করে তোলার জন্য আমরা হলুদ ব্যবহার করতে পারি। এখন জেনে নেয়া যাক, কিভাবে কাচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা করা যায় নিচে দেওয়া হল।
হলুদ এবং দুধের প্যাক
২ চামচ কাঁচা দুধের সাথে ১ চামচ কাঁচা হলুদ ভালো হবে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করা যেতে পারে। এরপর এই প্যাকটি সমস্ত ঘাড় এবং মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট না শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করব। যখন শুকিয়ে যাবে তখন ঠান্ডা পানি দিয়ে আস্তে আস্তে ঘষে তুলে ফেলবো। এতে আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও দাগহীন হয়ে উঠবে।
হলুদ লেবুর রস ও মধু
২ চামচ কাঁচা হলুদ বাটা ১ চামচ লেবুর রস ও ১ চামচ মধু মিশিয়ে একটি পেক তৈরি করে নিতে পারেন।কারণ লেবুর রস এবং মধু ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। পেকটি বানানো হয়ে গেলে আপনি এই প্যাকটি।
আপনার মুখে এবং ঘাড়ে ভালো করে লাগিয়ে রাখবেন যতক্ষণ না শুকায় ততক্ষণ পর্যন্ত রাখবেন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। লেবুর রস ব্লিচের কাজ করে এবং মধু দাগ দূর করতে সাহায্য করে। হলুদ মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
হলুদ ও লেবুর রস
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য হলুদ এবং লেবুর রসের জুড়ি নাই । ১ চামচ ময়দার সাথে ১ চা চামচ কাঁচা হলুদ ১ চা চামচ লেবুর রস এবং আধা চা চামচ কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে তা ঘাড়ে এবং মুখে ভালো করে লাগিয়ে রাখতে হবে।
যখন শুকিয়ে যাবে তখন ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে । এভাবে প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং মুখে কোন প্রকারের দাগ থাকবে না।
হলুদ ও আঙ্গুর
একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ ব্লান্ড করা আঙ্গুর নিয়ে তারপর আধা চা চামচ হলুদ এবং দুই থেকে তিন চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে ঘন করে প্যাক বানিয়ে নেব। তারপর প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিব।
এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিব। প্রতিদিন এভাবে যদি ব্যবহার করা হয়এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে ও ত্বক সুন্দর হবে।
হলুদ ও টক দই
একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ ময়দার সাথে ২ টেবিল চামচ টক দই ১ চামচ লেবুর রস এবং ১ চামচ কাঁচা হলুদ ও ১ চামচ মধু মিশিয়ে একটি প্যাক বানাতে পারেন। এরপর প্যাকটি আপনার মুখে লাগিয়ে নিতে হবে।
প্রায় ১৫ মিনিট একটি লাগিয়ে রাখতে হবে তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। যা আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে এবং ত্বক টানটান দেখাবে।
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে রুপর্চ্চা
শুধু কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম
ত্বকে হলুদ ব্যবহারের আগে ভালো করে এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। তা না হলে আপনার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। আমরা অনেকেই কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম জানিনা। তাই চলুন কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেই।
১। হলুদ ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করা উচিত নয়।হলুদ সব সময় অন্য কোন উপাদানের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। যেমন পানি, তেল, বেসন, চালের গুড়া ইত্যাদি সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। আর দিতে হবে খুবই অল্প পরিমাণে।
২। হলুদ ত্বকে লাগিয়ে কখনোই রোদে বের হবেন না বা রোদ লাগানো যাবে না । তাহলে ত্বক পুড়ে যাবে।
৩। রূপচর্চায় শুকনো হলুদের গুড়ার চাইতে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা সবচেয়ে বেশি ভালো। কাঁচা হলুদ দীর্ঘদিন সংগ্রহ করে রাখতে চাইলে কাঁচা হলুদ ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিয়ে রোদে শুকিয়ে দিতে পারেন।
৪। প্রতিদিন সকালে উঠে খালি পেটে কাঁচা হলুদ নিয়ম করে খেলে অনেক সমস্যা ও রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এবং অনেক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
৫। মুখে হলুদের প্যাক লাগানোর পর ২০ মিনিটে বেশি রাখবেন না। এর চেয়ে যদি বেশি সময় ধরে রাখেন তাহলে মুখ কালো হয়ে যেতে পারে। মুখের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য সাথে সাথে সাবান বা ফেসওয়াশ ব্যবহার করবেন না।
৬। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন কাঁচা হলুদ ৬০০ থেকে ৭০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত খাওয়া যায়। তবে দীর্ঘদিন একটানা কাঁচা হলুদ খাওয়া যাবে না।
কাঁচা হলুদের ফেসপ্যাক
প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় কাঁচা হলুদ ব্যবহার হয়ে আসছে। মুখের কালো দাগ, ব্রন, মুখে প্রদাহ কমাতে হলুদের ব্যবহার অপরিসীম। কাঁচা হলুদ মুখে মাখলে ত্বক ভিষন হলদে দেখায়। তাই তার সাথে যদি মেশাতে পারেন বেসন।
তাহলে ফেসপ্যাক এর কার্যকারিতা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য হলুদ দিয়ে কয়েকটি দুর্দান্ত ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন।আসুন জেনে নেওয়া যাক।
ব্রণ কমাতে হলুদ
ব্রণ আমাদের কম বেশি সকলেরই হয়ে থাকে। বিশেষ করে গরমের দিনে এই সমস্যাটা সবচেয়ে বেশি হয়। তাই এ সমস্যা থেকে সমাধানের জন্য আমাদেরকে যে কাজটি করতে হবে তা হল ২ টেবিল চামচ পরিমাণ কাঁচা হলুদ বাটা ১ টেবিল চামচ পরিমাণ বেসন ২ টেবিল চামচ টক দই ও ১ টেবিল চামচ মধু।
এই সমস্ত উপকরণগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর সেগুলো মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখতে হবে। এরপর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে দেখা যাবে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং মুখে ব্রণ হওয়ার প্রবণতাও কমে যাবে।
ত্বক কমল ও উজ্জ্বলতা রাখতে হলুদ
নিজের কাছে নিজের মুখ দেখতে বিরক্ত লাগছে। চিন্তা নেই, হাতের কাছে হলুদ আর ময়দা থাকলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ২ টেবিল চামচ ময়দ ১ চা চামচ হলুদ বাটা ৩ টেবিল চামচ দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে।
২০ মিনিট রাখার পরে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। দেখবেন আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
আরো পড়ুনঃ রুপর্চ্চায় এলোভেরার ব্যবহার
নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয়
প্রাচীনকাল থেকেই নিম পাতা ও হলুদ ব্যবহার হয়ে আসছে ত্বকের যত্নে। নিমপাতা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার প্রতিশোধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া ঘামাচি এলার্জি সহ ত্বকের নানা রোগ প্রতিরোধ করে এই নিমপাতা। নিমপাতা একটি শক্তিশালী জীবাণুর নাশক।
অন্যদিকে ত্বকের যত্নে প্রাচীনকাল থেকেই হলুদ ব্যবহার হয়ে আসছে। কাঁচা হলুদ এন্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ত্বকের যত্নে হলুদ খুবই কার্যকরী। গোলাপ জল ও দুধের সঙ্গে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে মুখে লাগান যাতে ত্বক সুন্দর হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু পানি দিয়ে হলুদের পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করা সবচেয়ে বেশি ভালো। হলুদ এমনিতেই শক্তিশালী উপাদান। হলুদ এবং পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করা পর সেগুলো মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিটের বেশি মুখে রাখবেন না। কারণ তা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তাই ২০ মিনিট পরেই আপনি আপনার ত্বক ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । অনেক সময় অনেকে হলুদ ব্যবহারের পর মুখ ভালো হবে পরিষ্কার করে না। এতে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
তাই হলুদ লাগানোর পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো ভাবে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। মুখ ধোয়ার পরে কোন ধরনের সাবান ও ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যাবে না। তাহলে হলুদের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে।
ব্রণ দূর করতে কাঁচা হলুদ
ব্রণের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চান। তবে এই সমস্যাটা মেয়েদের বেশি দেখা যায়। আপনার ত্বককে নষ্ট করে দেয়। আর এই ব্রণ ঢাকার জন্য মেয়েরা অনেক ধরনের মেকআপ ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে সমস্যা আরো বেড়ে যায়।
ব্রণ দূর করার সবচেয়ে ভালো উপায় আপনি ঘরে বসে নিতে পারবেন। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ত্বকের যত্ন নিলে ব্রণ সহ অনেক সমস্যায় দূর করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল হলুদ।হলুদ ব্রণ দূর করতে দারুণভাবে কাজ করে।
চলুন জেনে নেয়া যাক, ব্রণ দূর করতে হলুদের ব্যবহার। আপনার মুখে ব্রণ বা যে কোন দাগ থাকলে তা দূর করার জন্য কার্যকরী একটি উপায় হচ্ছে হলুদ । বিভিন্ন গবেষণা দেখা গেছে , হলুদের থাকা অনেক উপাদান ত্বকের দাগ দূর করতে দারুন ভাবে কাজ করে।
সেই সঙ্গে ব্রণ থেকে মুক্তি পেতেও সাহায্য করে। লেবুর রসের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন দেখবেন এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করার পরেই দেখবেন। আপনার মুখ থেকে ব্রণ কমে গেছে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
মন্তব্য
পরিশেষে বলতে চাই আমার এই, আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা কিভাবে কাঁচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা করা যায় ও হলুদের ফেসপ্যাক। এছাড়াও হলুদের বিভিন্ন উপকারিতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন।
আশা করি উপকৃত হয়েছেন।তাই আমার আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে একটুও ভালো লেগে থাকে। তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধবী, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন হয়তো তারাও উপকৃত হবে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url